রবিবার । ডিসেম্বর ৭, ২০২৫
স্পোর্টস ডেস্ক খেলা ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩:৪১ অপরাহ্ন
শেয়ার

ইয়ামালের মাঠের বাইরের আচরণে উদ্বিগ্ন ক্লাব


বার্সেলোনার সবচেয়ে গৌরবময় জার্সি—১০ নম্বর। ম্যারাডোনা, রোনালদিনহো, মেসিদের হাত ঘুরে যাওয়া এই ঐতিহ্যবাহী নম্বরটি এবার তুলে দেওয়া হয়েছে উঠতি তারকা লামিনে ইয়ামালের হাতে। তরুণ এই ফরোয়ার্ড এরই মধ্যে প্রতিশ্রুতিশীল পারফরম্যান্সে নজর কেড়েছেন, তবে মাঠের বাইরের জীবনযাপন নিয়ে বাড়ছে শঙ্কা।

গত বুধবার ইয়ামালকে ১০ নম্বর জার্সি পরানোর আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছে বার্সেলোনা। এর আগেও ক্লাবটির ইতিহাসে তরুণদের ওপর আস্থা রাখার নজির রয়েছে, তবে ইয়ামালের ক্ষেত্রে বার্সা টিম ম্যানেজমেন্ট কিছুটা সতর্ক। কারণ, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা নিয়ে আলোচনায় এসেছেন তরুণ এই স্প্যানিয়ার্ড।

১৮তম জন্মদিন স্মরণীয় করে রাখতে স্পেনের জনপ্রিয় পর্যটন শহর ইবিজায় একটি ব্যক্তিগত পার্টির আয়োজন করেছিলেন ইয়ামাল। আমন্ত্রিতদের জন্য ছিল কঠোর গোপনীয়তা—ফোন নিষিদ্ধ, ভিডিও তোলা নিষিদ্ধ। তবু কিছু ছবি ও ভিডিও ফাঁস হয়েছে, যা দেখে বিস্মিত হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম।

সবচেয়ে বিতর্ক তৈরি করেছে পার্টির আয়োজনে খর্বাকায় (বামন) মানুষদের বিনোদনের উপকরণ হিসেবে ভাড়া করা। এটি নিয়ে স্পেনের বেশ কয়েকটি সমাজসেবামূলক সংস্থা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং অভিযোগ তুলেছে যে, ইয়ামাল স্পেনের প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন লঙ্ঘন করেছেন। বিষয়টি নিয়ে সরকারিভাবেও তদন্ত শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে।

জন্মদিনের বিতর্কের আগেই গ্রীষ্মের ছুটিতে ইয়ামালের নাম জড়ায় আরও একটি বিতর্কে—এক প্রাপ্তবয়স্ক পর্নো তারকার সঙ্গে তার সম্পর্কের গুঞ্জন উঠে, যার বয়স ইয়ামালের চেয়ে ১২ বছর বেশি। এরপর ব্রাজিল সফরে গিয়ে ইয়ামাল সময় কাটান সাবেক বার্সা তারকা নেইমারের সঙ্গে। নেইমারের বাড়িতে তোলা কিছু ছবি ও ভিডিও তিনি নিজেই পোস্ট করেন সামাজিক মাধ্যমে।

বার্সা জানে নেইমার কতটা প্রতিভাবান, আবার মাঠের বাইরে কতটা অনিয়ন্ত্রিত। পিএসজিতে থাকাকালীন নেইমারের পার্টি লাইফ নিয়ে বিরক্ত ছিল ক্লাব, এমনকি তার বিরুদ্ধে চোটের অজুহাতে খেলায় না এসে পার্টিতে অংশ নেওয়ার অভিযোগও ছিল। সতীর্থদেরও এমন জীবনধারায় টেনে নেওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। স্প্যানিশ মিডফিল্ডার আন্দার হেরেরা একবার প্রকাশ্যে জানিয়েছিলেন, নেইমারের জন্মদিনে বিবাহিত-অবিবাহিত খেলোয়াড়দের জন্য আলাদা ফ্লোরে আলাদা পার্টির আয়োজন করেছিলেন তিনি।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ইয়ামাল বলেন, “আমি সাত বছর বয়সে নেইমারকে ক্যাম্প ন্যুতে দেখেছিলাম, আর তখন থেকেই তিনি আমার আইডল। মেসিও তখন খেলছিলেন, দুর্দান্ত পারফর্মার। কিন্তু নেইমার ছিলেন আলাদা, একেবারেই ব্যতিক্রম।”

এই ‘মুগ্ধতা’ যে যেন নেতিবাচক অনুকরণে রূপ না নেয়, সে দুশ্চিন্তাতেই ক্লাব কর্তৃপক্ষ। স্পেন অনূর্ধ্ব–১৯ দলের কোচ গ্যাবিনো কারমোনা বলেন, “নেইমার একসময় অদ্বিতীয় প্রতিভা ছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনযাপনের ভারসাম্য না রাখতে পারায় সে মেসি বা রোনালদোর মতো উচ্চতায় পৌঁছাতে পারেনি। ইয়ামালের ক্ষেত্রেও এমন কিছু না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে হবে।”

বার্সার একাধিক কর্মকর্তা মনে করেন, প্রতিভা দিয়ে যেমন ইয়ামাল আলো ছড়াতে পারেন, তেমনি শৃঙ্খলার অভাবে নিজেই নিজের পথ রুদ্ধ করে ফেলতেও পারেন। মাঠে সম্ভাবনার নাম হয়ে ওঠা এই তরুণ মাঠের বাইরেও দায়িত্বশীল হবেন কি না, এখন সেটাই বড় প্রশ্ন।