রবিবার । ডিসেম্বর ৭, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক দেশজুড়ে ২৯ জুলাই ২০২৫, ১০:১৪ অপরাহ্ন
শেয়ার

রংপুরে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় ১২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা



রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলদাদপুর বালাপাড়া গ্রামে ধর্ম অবমাননাকে কেন্দ্র করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতবাড়িতে হামলার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ১২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যায় এক ভুক্তভোগী গঙ্গাচড়া মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। বিষয়টি রাত ৯টার দিকে নিশ্চিত করেন গঙ্গাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল এমরান।

তিনি জানান, “হামলার ঘটনায় একজন বাদী হয়ে মামলা করেছেন। নিরাপত্তার কারণে তার নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় প্রায় ১২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের শনাক্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পুলিশের তথ্যমতে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ওঠার পর গত শনিবার রাতে এক কিশোরকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়। পরে তার বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা হয় এবং আদালতের নির্দেশে তাকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। কিশোরটি স্থানীয় একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী।

ঘটনার জেরে উত্তেজিত জনতা ওই রাতেই বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করে। একপর্যায়ে কিশোরের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এরপর আশপাশের আরও অন্তত ১৮টি হিন্দু পরিবারের ঘরে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। ঘটনার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোক জড়ো করা হয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। বর্তমানে পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

ঘটনার পর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুদের ঘরবাড়ি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার থেকেই মেরামত কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা।

তিনি বলেন, “ক্ষতিগ্রস্তদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। গ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। কেউ যেন আর নতুন করে সহিংসতায় জড়াতে না পারে, সে বিষয়ে আমরা কঠোর নজর রাখছি।”

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত চলছে। হামলাকারীদের শনাক্ত করে দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে।

ওসি আল এমরান বলেন, “সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ যৌথভাবে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ এবং কঠোর নজরদারিতে বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখনও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। প্রশাসনের আশ্বাসে তারা ঘরবাড়ি ফের গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।