
সিনেমা কেবল বিনোদন নয়, অনেক সময় ইতিহাসের অজানা অধ্যায়কে নতুন আলোয় তুলে ধরে। এবার সেই আলো ছড়িয়ে দিল প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট্ট দেশ পাপুয়া নিউগিনি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী বছরে দাঁড়িয়ে প্রথমবারের মতো দেশটি অস্কারে পাঠাচ্ছে তাদের চলচ্চিত্র ‘পাপা বুকা’। আর সেই ছবির অন্যতম মুখ ভারতীয় অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তী।
দ্য ওয়াল এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পাপা বুকা’ এক অনালোচিত ইতিহাসের দলিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ সময়ে ভারত ও পাপুয়া নিউগিনির অদেখা যোগসূত্র, ত্যাগ ও মানবিকতার গল্পই উঠে এসেছে সিনেমায়। বৃদ্ধ যোদ্ধা পাপা বুকা দুই ভারতীয় ইতিহাসবিদকে সঙ্গে নিয়ে উন্মোচন করেন অতীতের এমন কাহিনি, যা দুই দেশের ইতিহাসকে একসূত্রে গেঁথে দেয়।
চলচ্চিত্রটির পরিচালক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় নির্মাতা বিজুকুমার দামোদরন। যিনি এর আগে ‘ট্রিস আন্ডার দ্য সান’ ছবির জন্য সাংহাই ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পুরস্কার পেয়েছিলেন। এই ছবি তাই কেবল একটি সিনেমা নয়, বরং দুই সংস্কৃতির মধ্যে সেতুবন্ধনের এক দলিল।
অভিনয়শিল্পীদের তালিকাও ব্যতিক্রমী। মুখ্য ভূমিকায় আছেন পাপুয়া নিউগিনির ৮৫ বছর বয়সী উপজাতি নেতা সাইন ববোরা। তাঁর সঙ্গে অভিনয় করেছেন ঋতাভরী চক্রবর্তী, প্রকাশ বার, এবং স্থানীয় শিল্পীরা—জন সিকে, বার্বারা আনাতু, জ্যাকব ওবুরি, স্যান্ড্রা দাউমা প্রমুখ।

সুরের দায়িত্বে আছেন তিন-তিনবার গ্র্যামি জয়ী রিকি কেজ। সিনেমাটোগ্রাফি করেছেন ইয়েধু রাধাকৃষ্ণন, আর গল্পের সহলেখক ড্যানিয়েল জনেরধাগট। ছবির প্রযোজনা ও টেকনিক্যাল টিমের বড় অংশই তরুণ ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে গড়া, যাদের প্রায় ৬০ শতাংশ নারী। ফলে এটি হয়ে উঠেছে এক শিক্ষামূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্দোলনও।
প্রযোজক নোয়েলিনে টাউলা উনুমে বলেছেন, ‘পাপা বুকা’ কেবল সিনেমা নয়, আমাদের সংস্কৃতি ধরে রাখার এক প্রয়াস। বিশ্ববিদ্যালয়ের চল্লিশের বেশি শিক্ষার্থী হাতে-কলমে এই নির্মাণে যুক্ত হয়েছেন।
২০২৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর পাপুয়া নিউগিনিতে মুক্তি পাবে ‘পাপা বুকা’। একই বছরে দেশটি উদযাপন করছে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর। তাই অস্কার যাত্রার এ ঘোষণা দেশজুড়ে আবেগ ছড়িয়েছে। জাতীয় সাংস্কৃতিক কমিশনের প্রধান ডন নাইলেস বলেছেন, “এই ছবি আমাদের গল্প, আমাদের শিল্পভাষা। অস্কারের মঞ্চে তুলে ধরতে পারা আমাদের জন্য ঐতিহাসিক গর্ব।”
পরিচালক বিজুকুমারও বলেন, “এই সিনেমা কেবল দুই দেশের ইতিহাস নয়, মানবতার জয়গান। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পাপুয়া নিউগিনির হয়ে প্রথম অস্কারে নাম ওঠা এক অপার সম্মানের।”

অভিনেত্রী ঋতাভরী চক্রবর্তীর জন্যও এটি গর্বের মুহূর্ত। তাঁর উপস্থিতি ছবিটিকে দিয়েছে আন্তর্জাতিক আবেদন। ভারতীয় দর্শকের কাছে এটি হয়ে উঠেছে আবেগের অংশ, যেখানে দেশের শিল্পী এক বিশ্বমঞ্চে, অন্য দেশের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে দাঁড়িয়েছেন।
শেষ পর্যন্ত ‘পাপা বুকা’ মনে করিয়ে দেয়, দেশ, ভাষা বা দূরত্ব যতই হোক, মানুষের যন্ত্রণা ও ভালোবাসার ভাষা একটাই। সেই ভাষাই পাপুয়া নিউগিনিকে প্রথমবার অস্কারের মঞ্চে নিয়ে যাচ্ছে, ঋতাভরীর মতো শিল্পীদের সঙ্গে করে। স্বাধীনতার উল্লাস আর শিল্পের স্পর্শ মিলেমিশে যেন একটাই কথা বলে, সিনেমা শেষ পর্যন্ত মানুষকেই জয়ী করে।


























