
ফাইল ছবি
পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপে পাড়ি জমিয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস- দালালচক্রের প্রলোভনে ভিসা ও কাজের ধরন না বুঝে দেশটিতে গিয়ে এখন কর্মহীন শত শত বাংলাদেশি প্রবাসী চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
মালদ্বীপ সরকার ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য ভিসা উন্মুক্ত করলেও, অবৈধ নিয়োগের অভিযোগে ২০২৪ সালে তা আবারও বন্ধ করে দেয়। পরে ২০২৫ সালের মার্চে সীমিত আকারে দক্ষ ও অদক্ষ কর্মীদের জন্য ভিসা পুনরায় চালু করে দেশটি।
তবে এই সুযোগকেও পুঁজি করে সক্রিয় হয়ে ওঠে দালালচক্র। তারা ফ্রি ভিসার নামে প্রতারণার জাল ছড়িয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে নিরীহ বাংলাদেশিদের কাছ থেকে। অথচ মালদ্বীপের আইনে ফ্রি ভিসা বলে কিছু নেই।
বাস্তবে কিছু কোম্পানি তাদের খালি কোটা নির্দিষ্ট ফি’র বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়। সেই কোটাগুলো কিনে অসাধু চক্র বিদেশগামী কর্মীদের বোঝায়, তারা যেকোনো জায়গায় কাজ করতে পারবেন। কিন্তু মালদ্বীপের কঠোর শ্রম আইনে নির্দিষ্ট স্পন্সর ছাড়া কাজ করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। ধরা পড়লে জেল, জরিমানা ও তাৎক্ষণিকভাবে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
সম্প্রতি মালদ্বীপ সরকার ঘোষণা দিয়েছে, যারা উন্মুক্ত বা ফ্রি ভিসায় এসে নির্দিষ্ট নিয়োগকর্তার বাইরে কাজ করছেন, তাদের দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। ইতোমধ্যে অনেক বাংলাদেশি প্রবাসীকে আটক করে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং অনেকেই ফেরার অপেক্ষায় আছেন।
স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, গত অক্টোবরেই দেশটি ১১ হাজারেরও বেশি ওয়ার্ক ভিসা ইস্যু করেছে, যার বড় অংশই ছিল বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য। কিন্তু অনেকে ভিসার ধরন ও স্থানীয় আইন না বুঝেই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে কাজ হারাচ্ছেন বা অবৈধভাবে দেশে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন।
মালদ্বীপে থাকা প্রবাসীরা বলছেন, ফ্রি ভিসার কারণে বৈধভাবে কাজ করা বাংলাদেশিদেরও নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাই এখনই দালালচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সেলর (শ্রম) মো. সোহেল পারভেজ বলেন, ফ্রি ভিসা বলে কোনো ব্যবস্থা মালদ্বীপে নেই। প্রবাসীদের বারবার সতর্ক করা হচ্ছে, তবুও দালালদের প্রলোভনে অনেকে প্রতারিত হচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, মালদ্বীপের শ্রম আইনে নির্দিষ্ট কোম্পানি ছাড়া অন্য কোথাও কাজ করা গুরুতর অপরাধ। কেউ প্রতিশ্রুত কাজ না পেলে বা সমস্যায় পড়লে সরাসরি হাইকমিশনে যোগাযোগ করতে আহ্বান জানান তিনি।
সংশ্লিষ্টদের মতে, বাংলাদেশ যদি সময়মতো প্রতারণামূলক ফ্রি ভিসা বন্ধে উদ্যোগ না নেয়, তবে মালদ্বীপের মতো গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার হারানোর ঝুঁকিতে পড়বে দেশটি।





























