
মাদাগাস্কারে প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রি রাজোয়েলিনার সরকারের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিট বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। বিদ্রোহীরা জানিয়েছে, তারা দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটিতে চলমান রাজনৈতিক সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
রবিবার (১২ অক্টোবর) প্রশাসনিক ও কারিগরি সেনা ইউনিটের কর্মকর্তারা এক ভিডিও বার্তায় বলেন, আজ থেকে স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনীর সব নির্দেশনা তাদের ইউনিটের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া হবে।
এর কয়েক ঘণ্টা আগেই প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনার দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, তার সরকারের বিরুদ্ধে ‘অবৈধ ও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা’ চলছে। তবে কারা এর সঙ্গে জড়িত, তা উল্লেখ করা হয়নি।
এটি প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনার জন্য ২০২৩ সালের বিতর্কিত পুনর্নির্বাচনের পর সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই রাজোয়েলিনাকে ক্ষমতায় এনেছিল যেসব সেনা কর্মকর্তা, তারাই এখন তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
শনিবার প্রশাসনিক ও কারিগরি সেনা ইউনিটের কয়েকজন সেনা সদস্য তাদের সহকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন,
‘আমরা সরকারের দাসে পরিণত হয়েছি। অবৈধ নির্দেশ মানছি, জনগণকে রক্ষা করার বদলে তাদের ক্ষতি করছি।’
তারা আরও বলেন,
“উর্ধ্বতনদের নির্দেশ মানবে না। যারা তোমাকে তোমার সহযোদ্ধার ওপর গুলি চালাতে বলছে, তাদের দিকে অস্ত্র তাক করো।”
স্বাধীনতার পর থেকে মাদাগাস্কারের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর প্রভাব গভীর। দেশটি ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পর ১৯৭০-এর দশক ও ২০০৯ সালে একাধিক সামরিক অভ্যুত্থানের মুখোমুখি হয়। ২০০৯ সালের অভ্যুত্থানের মাধ্যমেই তৎকালীন মেয়র রাজোয়েলিনা ক্ষমতায় আসেন।
বর্তমান আন্দোলনের সূত্রপাত হয় গত সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে, যখন দেশজুড়ে পানি ও বিদ্যুতের সংকট নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। ধীরে ধীরে তা প্রেসিডেন্টবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (IMF) হিসাব অনুযায়ী, মাদাগাস্কারের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ জনগণ বিদ্যুতের সুবিধা পায়, আর নিয়মিতই ৮ ঘণ্টার বেশি সময় লোডশেডিং হয়।
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট রাজোয়েলিনা আন্দোলনকারীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, তাকে এক বছরের সময় দেওয়া হোক। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, জনগণের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হলে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবেন।
জাতিসংঘের হিসাবে, সেপ্টেম্বরের ২৫ তারিখ থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২২ জন নিহত এবং ১০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। যদিও সরকার এই সংখ্যা অস্বীকার করেছে।




























