
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা পুনরায় শুরুর আহ্বানকে ‘পশ্চাদগামী ও দায়িত্বজ্ঞানহীন’ পদক্ষেপ বলে নিন্দা জানিয়েছেন। খবর আল জাজিরা।
বৃহস্পতিবার রাতে এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ দেওয়া এক পোস্টে আরাঘচি বলেন, “নিজেদের ‘প্রতিরক্ষা বিভাগ’-এর নাম পরিবর্তন করে ‘যুদ্ধ বিভাগ’ রাখা এক পারমাণবিক শক্তিধর দুষ্কৃতকারী এখন পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা পুনরায় শুরু করতে যাচ্ছে।”
তিনি আরও লেখেন, ‘এই একই দুষ্কৃতকারী ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিকে অপবাদ দিচ্ছে এবং আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে সুরক্ষিত স্থাপনাগুলোর ওপর আরও হামলার হুমকি দিচ্ছে— যা আন্তর্জাতিক আইনের প্রকাশ্য লঙ্ঘন।’
এর আগে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল-এ এক পোস্টে আকস্মিকভাবে ঘোষণা দেন যে, তিনি প্রতিরক্ষা দপ্তরকে অবিলম্বে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার কাজ পুনরায় শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই ঘোষণা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই তিনি দক্ষিণ কোরিয়ায় এশিয়া-প্যাসিফিক ইকনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনের ফাঁকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ট্রাম্প বলেন, তিনি চান যুক্তরাষ্ট্র “সমান ভিত্তিতে” পারমাণবিক পরীক্ষা চালাক রাশিয়া ও চীনের মতো দেশগুলোর সঙ্গে, যাদের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার “পাঁচ বছরের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সমান হয়ে যাবে।”
কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের সিনিয়র ফেলো ও পারমাণবিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অঙ্কিত পাণ্ডা আল জাজিরাকে বলেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত মূলত রাশিয়া ও চীনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া, ইরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের চলমান পারমাণবিক বিরোধের নয়।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন চলতি সপ্তাহে জানিয়েছেন, মস্কো নতুন ‘পোসাইডন’ পারমাণবিকচালিত সুপার টর্পেডোর পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এর আগে মাসের শুরুতে তারা ‘বুরেভেস্তনিক’ পারমাণবিকচালিত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রও পরীক্ষা করে, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
অন্যদিকে, চীনও গত সেপ্টেম্বরে এক সামরিক কুচকাওয়াজে নিজেদের পারমাণবিক সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে, যেখানে নতুন ও আধুনিকায়িত ডংফেং-৫ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রসহ পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবস্থা প্রদর্শিত হয়।
তবে জাতিসংঘের তথ্যমতে, এই দেশগুলোর কেউই কয়েক দশক ধরে কোনো পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি— যা মাটির ওপর, ভূগর্ভে বা পানির নিচে কোনো বিস্ফোরণ ঘটানোর মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত হয়।
পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা ১৯৯৬ সালের ‘কমপ্রিহেনসিভ নিউক্লিয়ার টেস্ট-বেন ট্রিটি’ (CTBT) অনুযায়ী নিষিদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইরান এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করলেও এখনো তা অনুমোদন (ratify) করেনি। রাশিয়া ২০২৩ সালে চুক্তির অনুমোদন প্রত্যাহার করে নেয়।
জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, রাশিয়া (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) সর্বশেষ পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ১৯৯০ সালে, চীন ১৯৯৬ সালে, যুক্তরাজ্য ১৯৯১ সালে, যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯২ সালে এবং ফ্রান্স ১৯৯৬ সালে। গত দুই দশকে একমাত্র উত্তর কোরিয়াই পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়েছে— সর্বশেষটি ২০১৭ সালে।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পারমাণবিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ ও সম্মানসূচক ফেলো ট্রেভর ফিন্ডলে আল জাজিরাকে বলেন, ট্রাম্প আসলে কী ধরনের পরীক্ষার কথা বলেছেন তা এখনো পরিষ্কার নয়।
‘আমার ধারণা, তিনি পারমাণবিক সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের উৎক্ষেপণের কথা বলেছেন— যেমনটা উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া প্রকাশ্যে করে থাকে। এসব ক্ষেপণাস্ত্রে আসল পারমাণবিক ওয়ারহেড থাকে না, বরং নকল ওয়ারহেড ব্যবহার করা হয় এবং এতে কোনো বিস্ফোরণ ঘটে না,’ তিনি বলেন।
ফিন্ডলে আরও জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্রও নিয়মিত নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে— বিদ্যমান বা উন্নয়নাধীন উভয়ই— যেগুলো সাধারণত প্রশান্ত মহাসাগরে পতিত হয়। এসব পরীক্ষা সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয়, কিন্তু উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার মতো প্রচার করা হয় না।’
অন্যদিকে, ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির “সম্পূর্ণ ধ্বংস” দাবি করেছেন এবং বলেছেন, তিনি চান না তেহরান কোনো পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করুক। গত জুনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যৌথভাবে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর বিমান হামলা চালায়, আংশিকভাবে এর অগ্রগতি রোধের উদ্দেশ্যে।
তবে তেহরান জানিয়েছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ বেসামরিক উদ্দেশ্যে এবং দেশটি কখনো পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি।
কার্নেগির অঙ্কিত পাণ্ডা বলেন, ‘ইরান কখনো কোনো পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়নি। তারা সবসময় বলে এসেছে যে তারা পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে চায় না। তাদের হাতে কেবল কিছু উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম রয়েছে, সেটাই সব। তারা এখনো পর্যন্ত কোনো পারমাণবিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও পরীক্ষা করেনি।’




























