সাজসজ্জা নারীর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয় দ্বিগুণ। নারীর সাজসজ্জার ব্যাপারে ইসলাম উদারতা দেখিয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে, সৌন্দর্যবর্ধনে যেসব উপকরণের ব্যবহার ইসলামে বৈধ, তা অপচয় করা কিংবা তা নিয়ে পরস্পর গর্ব করা জায়েজ নেই। কেননা হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা (হালাল) যা ইচ্ছা খাও, পান করো ও পরিধান করো। তবে যেন তাতে দু’টি জিনিস না থাকে- অপচয় ও গর্ব।’ –সহিহ বোখারি: ১০/১৫২
পোশাক ও সাজসজ্জাঃ পোশাকের মধ্যে শরয়ি নীতিমালা হলো, এমন পোশাক পরবে, যা দ্বারা মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত সারা শরীর ঢেকে যায় এবং কাপড় এতটুকু মোটা হওয়া চাই, যাতে ওপর দিয়ে শরীর দেখা না যায়। নারীদের জন্য পুরুষের মতো পোশাক পরিধান করা হারাম। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) সূত্রে বর্ণিত, ‘হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অভিশাপ করেছেন ওই সব পুরুষের ওপর, যারা মহিলাদের আকৃতি ধারণ করে এবং ওই সব মহিলাদের ওপর, যারা পুরুষের আকৃতি ধারণ করে।’ –সহিহ বোখারি: ৫৮৮৫
ভ্রু প্লাক, দাঁত চিকন করে মাঝে ফাঁকা করা, শরীর খোদাই করে অঙ্কন করা জায়েজ নেই। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) অভিশাপ করেছেন ওই সব মহিলার ওপর, যারা নিজের শরীর খোদাই করে ও করায়, যারা ভ্রুর চুল উঠায় ও উঠিয়ে দেয় এবং দাঁত চিকন করে। কেননা তারা সৌন্দর্যের জন্য আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করে ফেলে।’ –সহিহ বোখারি: ৪৮৮৬
অবশ্য কোনো দাঁত অস্বাভাবিক ও অশোভনীয়ভাবে বাঁকা বা অতিরিক্ত থাকলে তা সোজা করা বা তুলে ফেলা বৈধ। কোনো বিকৃত অঙ্গে সৌন্দর্য আনয়নের জন্য অস্ত্রোপচার বৈধ। এভাবে অতিরিক্ত আঙুল বা মাংস হাতে বা দেহের কোনো অঙ্গে লটকে থাকলে তা কেটে ফেলা জায়েজ। কিন্তু ত্রুটিহীন অঙ্গে অধিক সৌন্দর্য আনয়নের উদ্দেশ্যে অস্ত্রোপচার করা জায়েজ নয়।
তবে কোনো মহিলার চেহারায় দাড়ি-মোচ উঠলে তা উপড়ে ফেলা উত্তম। -রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৭৩
অপ্রয়োজনে মহিলাদের মাথার চুল পুরুষের মতো ছোট করা নাজায়েজ। – ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩৫৮
নারীরা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হলে এমন পোশাক ও বোরকা পরে বের হবে, যা শালীনতা নির্দেশ করে। হজহযরত রত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘পুরুষের সাজসজ্জা হলো- সুগন্ধি লাগানো, যা আকর্ষণীয় রঙের হবে না। আর নারীদের সাজসজ্জা হলো- রংবেরঙের, তবে তার সুগন্ধি যেন বাইরে না ছড়ায়।’ –সুনানে তিরমিজি: ২৭৮৭
জুতার বিধানঃ অতিরিক্ত উঁচু সরু হিল তোলা জুতা ব্যবহার নিষিদ্ধ। তা ছাড়া এসব জুতা পরলে চলাফেরায় সমস্যা হয়, অনেক সময় পড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
চুলের বিধানঃ নারীদের চুলে বেণি বা ঝুঁটি গেঁথে মাথা বাঁধা উত্তম। চুল বেশি বা লম্বার আন্দাজ যেন পরপুরুষ না করতে পারে, সেদিকে লক্ষ রাখা নারীর কর্তব্য। কারণ নারীর সুকেশ এক সৌন্দর্য, যা পরপুরুষের সামনে প্রকাশ করা হারাম। হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শেষ জমানার আমার উম্মতের মধ্যে কিছু এমন লোক হবে, যাদের নারীরা হবে অর্ধনগ্ন। তাদের মাথা কৃশ (খোঁপা) উটের কুঁজের মতো হবে। তোমরা তাদের অভিশাপ করো, কারণ তারা অভিশপ্ত।’
চুল বেশি দেখানোর উদ্দেশ্যে কৃত্রিম চুল বা পরচুলা ব্যবহার করা হারাম। স্বামী চাইলেও তা মাথায় লাগানো যাবে না।
সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নারীরা কালো খেজাব ছাড়া অন্যান্য খেজাব দিয়ে চুল রাঙাতে পারে। তবে ফ্যাশনের জন্য চুল ছোট ছোট করে কাটা বৈধ নয়। তবে চুলের অগ্রভাগ এলোমেলো হলে সামান্য কাটতে পারে। কিন্তু না কাটাই উত্তম, কেননা বেশি চুল নারীর সৌন্দর্য।
নাক বা কান ফুঁড়িয়ে গয়না পরিধান করাঃ মহিলার নাক বা কান ফুঁড়িয়ে তাতে অলংকার ব্যবহারের ব্যাপারে ইসলামে বৈধতা রয়েছে। এভাবে গলায় হার বা পায়ে নূপুর পরাও বৈধ। তবে যদি নূপুরে বাজনা থাকে, তাহলে ঘরের বাইরে পরপুরুষের সামনে তা পরে হাঁটাচলা করা জায়েজ নেই।
প্রসাধনী ব্যবহারের বিধানঃ হারাম বস্তু ও ক্ষতিকর পদার্থমুক্ত লিপস্টিক, মেকআপ, স্নো, পাউডার প্রভৃতি অঙ্গরাজ ব্যবহার বৈধ। নিজেকে সর্বদা সুরভিত করে রাখায় নারীত্বের এক আনন্দ আছে। এ জন্য স্বামীর কাছে যাওয়ার আগে অ্যালকোহল ও হারাম স্পিরিটমুক্ত সেন্ট-পারফিউম ব্যবহার নারীর জন্য জায়েজ, বরং উত্তম। নখে নেইলপলিশ ব্যবহারও জায়েজ, তবে অজুর আগে তা তুলে ফেলা আবশ্যক। না তুললে অজু হবে না। এটি ব্যবহারের উত্তম সময় হলো- মাসিকের দিনগুলোতে। কেননা তখন অজু-গোসল করতে হয় না।
মেয়েদের হাত-পা ও নখ সর্বদা মেহেদি দিয়ে রাঙিয়ে রাখা উত্তম। কেননা এতে স্বামীর দাম্পত্য জীবনে তৃপ্তি আনে। আর অজু-গোসলের সময় তা কষ্ট করে তুলে ফেলার ঝামেলাও নেই। কারণ নেইলপলিশের মতো এতে কোনো আবরণ নেই। হাত-পায়ের নখ বড় রাখা একটি ঘৃণিত কাজ। অনেক সময় নখের ভেতর ময়লা জমে খাবারের সময় পেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তাই প্রতি সপ্তাহে হাত-পায়ের নখ কাটা সুন্নত।