জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার প্রতি সংহতি জানিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিক্ষোভ করেন দেশটিতে কর্মরত কয়েকশ প্রবাসী বাংলাদেশি। আন্দোলনের জেরে স্থানীয় পুলিশ অনেককে গ্রেপ্তার করে। প্রথম ধাপে আটক ১৮৯ জনকে ক্ষমা করে দেশে ফেরত পাঠানো হলেও পরবর্তীতে নতুন করে গ্রেপ্তার হচ্ছেন আরও অনেকে। কিন্তু এসব নতুন গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মুক্তিতে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না, যা নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তাদের স্বজনরা।
‘জুলাই আন্দোলনে জেলবন্দি রেমিট্যান্স যোদ্ধা পরিবার’ নামের একটি সংগঠন জানায়, বর্তমানে আবুধাবির আল সদর জেলসহ বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২৫ জন বাংলাদেশি আটক রয়েছেন। তবে সরকারিভাবে দূতাবাসের কাছে ২০ জন ও মন্ত্রণালয়ের কাছে ২৭ জনের তালিকা রয়েছে। তালিকা ও তথ্যের এই অসামঞ্জস্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
প্রথম ধাপে মুক্তিপ্রাপ্তদের ব্যাপারে জানা যায়, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার গত বছরের সেপ্টেম্বর ও নভেম্বরে মোট ১৮৯ জন বাংলাদেশিকে সাজা মওকুফ করে দেশে পাঠায়। তবে তাদের ‘নো-এন্ট্রি’ লিস্টে রাখা হয়েছে, ফলে তারা আপাতত উপসাগরীয় জিসিসি অঞ্চলে প্রবেশ করতে পারবেন না।
বর্তমানে যাদের আটক করা হচ্ছে, তাদের অনেককেই দেশে ফেরার সময় বিমানবন্দর থেকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কারণ, আমিরাতের ইমিগ্রেশন সিস্টেমে আন্দোলনকারীদের তথ্য আপলোড করে রাখা হয়েছে।
বন্দিদের স্বজনদের অভিযোগ—আন্দোলনকারীরা দেশের গণতন্ত্রের পক্ষে রাস্তায় নামলেও এখন তাদের মুক্তিতে সরকার উদাসীন। চট্টগ্রামের প্রবাসী শহীদুল আমিন মুন্নার স্ত্রী রোজিনা আক্তার বলেন, ‘আমার স্বামী নিজের জন্য নয়, দেশ ও ছাত্রদের জন্য আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। অথচ তার মুক্তিতে কেউ এগিয়ে আসছে না।’
মানবাধিকার সংস্থা এবং প্রবাসী সংগঠনগুলো দাবি করছে, দ্রুত কূটনৈতিকভাবে হস্তক্ষেপ না করলে এসব প্রবাসী ও তাদের পরিবার ভয়াবহ সংকটে পড়বে। হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, ইমিগ্রেশনের ডাটা থেকে এসব তথ্য মুছে ফেলা জরুরি।
দূতাবাস ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অবশ্য জানাচ্ছেন, তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবুধাবিতে নিযুক্ত শ্রম কাউন্সিলর লুৎফুন নাহার নাজীম বলেন, ‘আমাদের কাছে ২০ জনের তালিকা আছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে তথ্য না পাওয়ায় সঠিক হিসাব জানা কঠিন।’
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার একান্ত সচিব সারওয়ার আলম বলেন, ‘আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ তার দেশের আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এখানে আলাদাভাবে মন্ত্রণালয়ের কিছু করার থাকে না। কয়েক মাস কারাভোগ করার পর ছেড়ে দেবে। তবে আমরাও চেষ্টা অব্যাহত রাখব।’
সৌজন্যে: আমার দেশ অনলাইন