
এলিনা শাম্মী
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিনোদন জগতের তারকাদের একটি অংশ প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি রাজপথে নেমেও আন্দোলন করেছেন। সেই তালিকায় আছেন অভিনেত্রী এলিনা শাম্মী।
সে সময় দুই ভাগে বিভক্ত ছিলেন বিনোদন জগতের শিল্পীরা। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগ এবং দলটির সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটে। আবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলিও চালিয়ে ছিল শিক্ষার্থীদের ওপর। এতে বহু শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র জনতার পক্ষে রাস্তায় নেমেছিলেন অভিনেত্রী এলিনা শাম্মী। স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে চড়িয়েছিলেন গলা। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরব ছিলেন অভিনেত্রী।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে অভিনেত্রী লিখেছেন, একবার পড়বেন। যখন একটা ফলের বেশির ভাগ অংশই পচে যায়, সেই ফল খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়ে। একটা সমাজেও যখন পচন ধরে, এবং বেশি অংশই পচে যায়, তখন সেখানে অনেকখানি বাদ দিয়ে নতুন করে শুরু করতে হয়। সেজন্য সময়ের প্রয়োজন হয়। এক-দেড় যুগ ধরে যে লোকালয়ে, যে সমাজে ধীরে ধীরে পঁচন ধরেছে, দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল চারদিকে সেখানে এক বছরেই সুগন্ধি আতরের সুঘ্রাণ প্রত্যাশা করা বাতুলতা বৈ আর কিছু নয়।
সময় বদলায় এবং সময়ের প্রয়োজনে শাসক বদলায়, কিন্ত দেশের জনগণ একই থেকে যায় উল্লেখ করে এই অভিনেত্রী লিখেন, মানুষ অভ্যাসের দাস। আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে ঘুষ নেয়ার, আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে ঘুষ দেওয়ার। আমরা রমজান এলে, বন্যা এলে জিনিসপত্রের দাম বাড়াই। আবার কেউ সত্য কথা বলতে এলে তাকে গুম করি অথবা খুন করি অথবা প্রাণপণ করে সমাজের কাছে হেয় প্রতিপন্ন করি। আমাদের স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিগুলোতে ছাত্ররা যেন শিক্ষক, আর শিক্ষককে নিজেদের মান-সম্মান রক্ষা করতে ছাত্রদের মতো আচরণ করতে হয়। ঈদ এলে আমরা পরিবহন ভাড়া ডাবলের বেশি বাড়িয়ে দেই। আমরা আমাদের মতের মিল না হলে বয়সে বড় সম্মানিত গুরুজনদের গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধা করি না। আমরা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগেই ‘আপনার ভোট দেয়া হয়ে গেছে’ এসব শুনে গা সওয়া হয়ে গেছে, যেন এটাই স্বাভাবিক।
তিনি আরও লিখেন, এমন শত শত অসঙ্গতি দেখা যায় আমাদের সমাজে যেগুলো আমাদের সয়ে গেছে। মানে আমরা এসবেও অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তাহলে কী দাঁড়াল? এসবকিছু আমাদের অভ্যাস। এসব অভ্যাস পরিবর্তন করতে হলে দেশে একটা লম্বা সময় ধরে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত শাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সেজন্য যে কিছু সময় প্রয়োজন, সেটা তো অস্বীকার করা যাবে না।
সবশেষ এই অভিনেত্রী লিখেন, সমস্যা হচ্ছে আমি সুন্দর দেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি আবার আমিই দুর্নীতি করি। আমিই স্বৈরাচারকে হটাই কিন্ত ব্যক্তিজীবনে আমিই যেন স্বৈরাচার। আমি ময়লা দেখলে নাক সিঁটকাই, আবার আমিই আমার ময়লার পলিথিন রাস্তায় ফেলি। ঘুষ মন্দ বলে চিৎকার করি, আবার ঘুষ দেওয়ার জন্য সুযোগ খুঁজি। ভাই, নিজেকে বদলে নিন, দেশ বদলাতে কয়দিন।