বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক ভিসায় কুয়েতে যেতে ভিসার প্রকৃত খরচ মাত্র আড়াই হাজার টাকা হলেও দালাল চক্রের কারণে অনেককে গুনতে হচ্ছে ছয় থেকে আট লাখ টাকা পর্যন্ত। দীর্ঘদিন ধরে ভিসা প্রক্রিয়া জটিল থাকায় এই সুযোগে দালালরা গড়ে তুলেছে কোটি টাকার বাণিজ্য। সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তারা অসহায় শ্রমিকদের পকেট কাটছে অবাধে।
চাঁদপুরের দেলোয়ার হোসেন পাটোয়ারী সৌদি আরবে পাঁচ বছর থাকার পর দেশে ফিরে মুদি দোকান চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে চলতি বছরের মে মাসে কুয়েত পাড়ি জমান। কুয়েত যেতে তার খরচ হয় প্রায় সাত লাখ টাকা—যা প্রকৃত খরচের কয়েক গুণ।
একই অভিজ্ঞতা কুমিল্লার ইকবাল হোসেনেরও। ইকবাল হোসেন জানান, দালালের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা খরচ করে কুয়েত আসতে হয়েছে। এই টাকা জোগাড়ে তাকে ঋণও নিতে হয়েছে।
২০০৭ সালে কুয়েত বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা কার্যক্রম বন্ধ করে দিলে ভিসা প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়ে। এর সুযোগে দালালরা খরচ কয়েক গুণ বাড়িয়ে নেয়। ২০২৪ সালে ৩৩ হাজার ৩১ জন এবং চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই প্রায় পাঁচ হাজার বাংলাদেশি কুয়েত গেছেন।
কুয়েত প্রবাসী কমিউনিটি নেতা শফিকুল ইসলাম বাবুল জানান, বিশেষ অনুমোদনের মাধ্যমে দীর্ঘ সময় ধরে সীমিত ক্যাটাগরির ভিসা দেওয়া হয়েছে, যার সুযোগ নিয়ে দালালরা ভিসার দাম বাড়িয়েছে। প্রবাসী মোহাম্মদ বিলাল হোসেন বলেন, কোম্পানির প্রয়োজন হলে ভিসার খরচ নিয়োগকর্তারই বহন করার কথা।
সরকারি হিসাবে কুয়েতসহ ছয় দেশে শ্রমিক ভিসার সর্বোচ্চ খরচ ধরা হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু সোশাল অ্যাক্টিভিস্ট আব্দুস সালেহ বলেন, প্রকৃত ভিসা প্রসেসিং ও সত্যায়ন খরচ কুয়েতি মুদ্রায় ছয় দিনার (আড়াই হাজার টাকারও কম), যা দালালদের মাধ্যমে দুই হাজার দিনার বা আট লাখ টাকা পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব কুয়েতের নেতা মোহাম্মদ হেবজু মিয়া জানান, দালাল চক্রের কারণেই অভিবাসন খরচ বাড়ছে। কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম মিনিস্টার জানান, বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৪৫০টি ভিসা সত্যায়নের আবেদন আসে, যার এক-তৃতীয়াংশ দক্ষ কর্মীর।
প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব এ জেড এম নুরুল হক বলেন, নির্ধারিত অভিবাসন খরচের চেয়ে অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হলে নির্দিষ্ট তথ্য প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
কুয়েত সরকার ও বাংলাদেশ দূতাবাস বলছে, আসল ভিসা খরচ অনেক কম এবং নিয়োগকর্তা নিজেই অনেক ব্যয় বহন করে থাকে। তবুও এই দালাল সিন্ডিকেট ঠেকাতে নেই কোনো কার্যকর ব্যবস্থা।





























