
আপনার প্রিয় বিড়ালটি হঠাৎ রেগে যায়, কুকুরটি করুণভাবে কাঁদতে থাকে কিংবা খরগোশটি অস্বাভাবিকভাবে আচরণ শুরু করে—এমন পরিস্থিতিতে আপনি দ্বিধায় পড়ে যান। বুঝে উঠতে পারেন না, প্রাণীটি কী বলতে চাইছে বা আপনি কী করবেন। এই অস্পষ্টতা অনেকের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ। তবে যাঁরা প্রাণীর আচরণ বুঝতে পারেন, তারাই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
এবার সেই জট খুলে দিতে এগিয়ে আসছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। এটি বলে দেবে—আপনার পোষা প্রাণীর অঙ্গভঙ্গি ও আচরণ আসলে কী বোঝাতে চায়, আর আপনার করণীয়ই বা কী।
এই লক্ষ্যেই গড়ে তোলা হচ্ছে একটি বিশেষ গবেষণা প্রতিষ্ঠান, যেখানে প্রাণীর আচরণ বিশ্লেষণে ব্যবহার করা হবে স্নায়ুবিজ্ঞান, দর্শন, পশুচিকিৎসা, আইন, বিবর্তন, মনোবিজ্ঞান, অর্থনীতি ও এআই প্রযুক্তি। এই প্রতিষ্ঠান নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৪০ লাখ পাউন্ড।
নতুন এই গবেষণা কেন্দ্রের নাম ‘জেরেমি কলার সেন্টার ফর অ্যানিম্যাল সেন্টিয়েন্স’। এটি পরিচালনা করবে লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স। ২০২৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে কেন্দ্রটি অ-মানব প্রাণীর সংবেদনশীলতা নিয়ে গবেষণা শুরু করবে।
শুধু পোষা প্রাণীই নয়, গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে পোকামাকড়, কাঁকড়া এবং কাটলফিশের মতো বিবর্তনের মধ্যবর্তী প্রাণীরাও। গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যা প্রাণীর আচরণের পেছনের মানসিক অবস্থা অনুধাবন করতে সাহায্য করবে। এমনকি কোনো ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ দেখা দিলে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দিকনির্দেশনাও দেবে।
গবেষণা কেন্দ্রটির পরিচালক অধ্যাপক জোনাথন বার্চ বলেন, “আমরা প্রায়ই চাই পোষা প্রাণীরা যেন মানুষের মতো আচরণ করে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এআই আমাদের সেই ব্যবধান ঘোচাতে সাহায্য করবে—প্রাণীর ‘ভাষা’ বুঝে নেওয়ার এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে।”
তবে বার্চ সতর্কও করেছেন—এআই অনেক সময় এমন প্রতিক্রিয়া তৈরি করে, যা বাস্তবতা এড়িয়ে চলে। পোষা প্রাণীর ক্ষেত্রে ভুল তথ্য বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাই প্রয়োজন দায়িত্বশীল, নৈতিক ও বৈজ্ঞানিকভাবে যাচাই করা এআই ব্যবহার।
প্রতিষ্ঠানটি বৈশ্বিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে, যাতে প্রাণী কল্যাণ এবং এআই ব্যবহারে আন্তর্জাতিক নীতিমালা গড়ে তোলা যায়।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও প্রাণী সুরক্ষা কেন্দ্রের পরিচালক জেফ সেবো বলেন, “প্রাণীদের সংবেদনশীলতা, তাদের কল্যাণ এবং এআইয়ের প্রভাব—এসব বিষয় সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, অথচ অনেকটাই উপেক্ষিত।”
কেন্দ্রটির অন্যতম ট্রাস্টি, অধ্যাপক ক্রিস্টিন অ্যান্ড্রুজ জানান, এ গবেষণা শুধু আচরণ বিশ্লেষণেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তাঁর কথায়, “মানব চেতনার প্রকৃতি ও উৎপত্তি নিয়ে এখনও আমরা অনেকটাই অন্ধকারে। বিভিন্ন জীবের আচরণ ও জিনগত উপাত্ত অধ্যয়ন করে বিজ্ঞান এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছে।”
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান




























