ময়মনসিংহে কিংবদন্তি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক ভিটা ভাঙা হচ্ছে—এমন খবরে উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছে ভারত। বাড়িটি এক সময় স্থানীয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতো। এটি সত্যজিৎ রায়ের দাদু, খ্যাতিমান সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর মালিকানাধীন ছিল।
সংরক্ষণে ভারতের আহ্বান, সহযোগিতার আশ্বাস
মঙ্গলবার (১৫ জুন) এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাড়িটি ভেঙে ফেলা “খুবই দুঃখজনক”। তারা এ স্থাপনাটিকে ভারত-বাংলাদেশের যৌথ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনায় রেখে তা সংরক্ষণ ও জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানায়।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, “বাংলা সংস্কৃতির নবজাগরণের প্রতীক এই ভবনটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে ভাঙার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করছি। ভারত সরকার এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।”
কেন ভাঙা হচ্ছে এই ঐতিহাসিক ভবনটি?
বাংলাদেশি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শত বছরের পুরোনো এই ভবনটি ভেঙে আধা-পাকা একটি নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে নতুন করে গড়ে উঠবে ময়মনসিংহ শিশু একাডেমি। নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির কারণে শিশু একাডেমির কার্যক্রম আগে থেকেই ভাড়া করা স্থানে চলছে।
স্থানীয় শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা মো. মেহেদী জামান বলেন, “গত ১০ বছর ধরে বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। পুরোনো ভবনটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ, তাই নতুন ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
সংস্কৃতি অঙ্গনের ক্ষোভ ও সংরক্ষণের দাবি
স্থানীয় বাসিন্দা ও সংস্কৃতিকর্মীরা এই ঐতিহাসিক ভবনের অবহেলা ও সংরক্ষণের অভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের ভাষ্য, ভবনটি ভেঙে ফেলা মানে সত্যজিৎ রায় পরিবারের সঙ্গে ময়মনসিংহের সংযোগও মুছে ফেলা।
কবি শামীম আশরাফ বলেন, “ছাদে ফাটলসহ বহু বছর ধরে বাড়িটি জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তার ঐতিহাসিক গুরুত্বকে কখনো গুরুত্ব দেয়নি।” তিনি জানান, সংরক্ষণের দাবি বহুবার জানানো হলেও তাতে কেউ কর্ণপাত করেনি।
ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ
ময়মনসিংহ শহরের হরিকিশোর রায়চৌধুরী রোডে অবস্থিত বাড়িটি ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর সরকার অধিগ্রহণ করে। ১৯৮৯ সালে এটিকে শিশু একাডেমিতে রূপান্তর করা হয়। তবে গত এক দশক ধরে ভবনটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
এদিকে, বুধবার স্থাপনাটি ভাঙার কাজ বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ।
সূত্র: ইন্ডিয়া টিভি



























