সোমবার । ডিসেম্বর ৮, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক ফিচার ১৭ জুলাই ২০২৫, ১২:২৩ অপরাহ্ন
শেয়ার

শূন্য বর্জ্যের শহর গড়তে এগিয়ে চলেছে চীন


‘শূন্য-বর্জ্য শহর’ হলো এমন কোনো শহর, যেখানে বর্জ্য উৎপন্ন হলেও তা উটকো ঝামেলা হিসেবে পড়ে থাকে না। এটি এমন একটি মডেল শহরকে বোঝায়—যেখানে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ও জীবনধারা মেনে চলা হয়, উৎপাদনে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় এবং যা কিছু ফেলনা, তা আবার কাজে লাগানোর ব্যবস্থা থাকে।

চীনে বছরের পর বছর ধরে চলা নানা পাইলট প্রকল্পগুলো এই দৃষ্টিভঙ্গিকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে। বাড়িয়েছে পুনর্ব্যবহার হার, কমিয়েছে গৃহস্থালি বর্জ্যের পরিমাণ এবং উন্নত করেছে শহরাঞ্চলের বাসযোগ্যতা।

১৪তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অধীনে, ১১৩টি প্রিফেকচার-স্তরের শহর এবং ৮টি বিশেষ অঞ্চলকে শূন্য-বর্জ্য শহর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েছে চীন। এর আওতায় ৩,৭০০টিরও বেশি প্রদর্শনী প্রকল্প চালু হয়েছে—যার মধ্যে রয়েছে কমিউনিটি ভিত্তিক বর্জ্য আলাদা করার ব্যবস্থা এবং শিল্পে উপজাত পুনরুদ্ধার কেন্দ্র। এসব প্রকল্পে বিনিয়োগ ছাড়িয়ে গেছে ১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান।

উত্তর চীনের সিওং’আন নিউ এরিয়া দেখাচ্ছে ভবিষ্যতের শহরের রূপরেখা। এখানে প্রতিটি পাড়ায় নিজস্ব ‘বর্জ্য কোষ’ রয়েছে। বাড়ি ভাঙাচোরা জিনিসগুলো প্রক্রিয়াজাত করে নতুন ভবনে ব্যবহার করা হয়। মানুষ স্মার্ট বিনে বর্জ্য আলাদা করে ফেলে, আর পুরোনো ধাতু-প্লাস্টিককে পুনরায় কাঁচামালে পরিণত করে।

এই কোষ-ভিত্তিক পদ্ধতি বর্জ্যকে পরিণত করছে একটানা সম্পদ প্রবাহে—যা শহরায়ন এবং পরিবেশ সুরক্ষাকে একসঙ্গে এগিয়ে নিচ্ছে।

এর বিপরীতে, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছোংছিং শহর জোর দিচ্ছে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার ওপর। প্রতিটি এলাকায় গড়ে উঠেছে বর্জ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র। জৈব বর্জ্য পাঠানো হয় কম্পোস্টিং ইউনিটে। অবশিষ্টাংশ দিয়ে তৈরি হয় বিদ্যুৎ।

পাশাপাশি চালু হয়েছে রিপেয়ার ক্যাফে ও আপসাইক্লিং ওয়ার্কশপ—যেখানে পুরোনো জিনিস ঠিক করে আবার ব্যবহারযোগ্য করা হয়।

শেনচেন এক ধাপ এগিয়ে। এখানে চলছে নানা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা। খাবারের উচ্ছিষ্ট থেকে বানানো হচ্ছে শৈবাল-ভিত্তিক বায়োপ্লাস্টিক, আবার রোবট দিয়ে ই-বর্জ্য থেকে তোলা হচ্ছে মূল্যবান ধাতু। এসব কাজ করছে স্টার্টআপ ও বিশ্ববিদ্যালয় একসাথে।

সেখানে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান একসাথে কাজ করছে। শেনচেনের এই পরীক্ষামূলক সংস্কৃতি দেখিয়ে দিচ্ছে—শূন্য-বর্জ্য শহর গড়ে তোলা সম্ভব উন্মুক্ত ও উদ্ভাবনী চর্চার মাধ্যমে।

চীন এখন পাইলট প্রকল্প থেকে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারের পথে। এই মডেল শহরগুলো নগর রূপান্তরের জন্য তৈরি করছে কার্যকর নকশা।

নীতিমালা, নগর পরিকল্পনা ও কমিউনিটি উদ্যোগের প্রতিটি স্তরে শূন্য-বর্জ্য ভাবনা ঢুকিয়ে দিয়ে চীন একটি সবুজ ভবিষ্যতের পথ রচনা করছে—যেখানে প্রতিটি পরিত্যক্ত বস্তুকেই বিবেচনা করা হয় সম্পদ হিসেবে, এবং শহরের উন্নয়ন চলে প্রকৃতির হাতে হাত রেখেই।

তথ্য ও ছবি: সিজিটিএন