সোমবার । ডিসেম্বর ৮, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক আন্তর্জাতিক ২০ জুলাই ২০২৫, ৩:৫৮ অপরাহ্ন
শেয়ার

পানির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে কাবুল, দেখা দিতে পারে মানবিক বিপর্যয়


পানির অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে কাবুল, দেখা দিতে পারে মানবিক বিপর্যয়

এক ভয়ঙ্কর বিপর্যয়ের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল। আধুনিক বিশ্বে এটি হতে পারে বিশ্বের প্রথম রাজধানী শহর যা পুরোপুরি পানি-শূন্য হয়ে পড়বে। এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে আন্তর্জাতিক এনজিও মার্সি কোর্পস।

আন্তর্জান্তিক গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে এ ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে।

সংবাদ মাধ্যম সিএনএন প্রতিবেদ সংক্রান্ত এক তদন্তে সরেজমিনে দেখতে পায় ৪২ বছর বয়সী রাহিলা ও তাঁর পরিবারের দিন শুরু হয় পানির খোঁজে। প্রতিদিন তিনি কাবুলের শুকিয়ে যাওয়া পাহাড়ি এলাকার রাস্তায় বের হন বালতি ও জেরিক্যান হাতে, ট্যাংকার এলেই ছুটে যান কিছু পানি সংগ্রহ করতে।

রাহিলা জানান “আমরা এক ফোঁটাও পানযোগ্য পানি পাই না। প্রতিটি লিটার পানির জন্য আমাদের বাজেট ও ধৈর্য ভেঙে পড়ছে,” ।

২০০১ সালে তালেবান পতনের পর কাবুলে ব্যাপক হারে মানুষ আসতে থাকে। এর কারণ হিসেবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, হিন্দু কুশ পর্বত থেকে আগত বরফ গলে তৈরি হওয়া পানির উৎসের হ্রাস সহ নানা কারন রয়েছে।

এছাড়াও প্রাকৃতিকভাবে যত পানি রিচার্জ হয়, কাবুল তার থেকে বছরে ৪৪ মিলিয়ন ঘন মিটার বেশি পানি তুলছে।

মেরি কোর্পস জানায়, গত দশকে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৩০ মিটার পর্যন্ত নেমে গেছে এবং শহরের প্রায় অর্ধেক বোরহোল ইতিমধ্যেই শুকিয়ে গেছে।

২৮ বছর বয়সী আহমদ ইয়াসিন তাঁর পরিবারের জন্য ৬ মাস ধরে টাকা জমিয়ে ১২০ মিটার গভীর কূপ খনন করেছেন। তবু সেই পানিও পানযোগ্য নয়। ইয়াসিন বলেন, “আমরা পানি ফুটিয়ে ঠান্ডা করে খাই। পানি ফিল্টার কেনার সামর্থ্য নেই,”।

মেরি কোর্পস বলছে, কাবুলের ৮০ শতাংশ ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত — মূলত পিট ল্যাট্রিন ও শিল্প বর্জ্যর কারণে।

এতে সবচেয়ে বেশি বিপদে আছেন নারীরা। তালেবান শাসনের নিয়মে পুরুষ অভিভাবক ছাড়া বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ। ২২ বছর বয়সী এক তরুণী বলেন, “পানির জন্য বাইরে যেতে আমাদের হয়রানি ও ভয় পেতে হয়। অনেক মেয়ে পানির জন্য স্কুল বাদ দিচ্ছে।”

ইউনিসেফ পূর্বাভাস দিয়েছে, এই গতিতে চললে ২০৩০ সালের মধ্যে কাবুলের পানি শেষ হয়ে যাবে।

মেরি কোর্পসের পরিচালক মারিয়ানা ফন জাহন বলেন, “এটি শুধু পানি সংকট নয়, একটি স্বাস্থ্য সংকট, অর্থনৈতিক সংকট এবং মানবিক সংকট একসাথে।”

আরও উদ্বেগের বিষয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধ হওয়ার পর, পানি ও স্যানিটেশনের জন্য ২০২৫ সালের শুরুতে প্রয়োজনীয় ২৬৪ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে মাত্র ৮ মিলিয়নই বরাদ্দ হয়েছে।

কী হতে পারে সামনে?

স্থানীয় ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ছে

বৈশ্বিক সহায়তা বন্ধ

শিশুরা শিক্ষা বাদ দিয়ে পানি আনতে যাচ্ছে

নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে

অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতি বাড়ছে

রাহিলা বললেন, “আর বাঁচার উপায় নেই। আবার ঘর ছেড়ে চলে যেতে হবে। কিন্তু কোথায় যাব, জানি না।”