সোমবার । ডিসেম্বর ৮, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক ফিচার ২১ জুলাই ২০২৫, ৯:৫৪ অপরাহ্ন
শেয়ার

স্বপ্নের আকাশে প্রথম একা ওড়ার দিনই জীবন ফুরিয়ে গেল তৌকিরের



সকালে খবর আসে—প্রশিক্ষণের সব ধাপ সফলভাবে পেরিয়ে এবারই প্রথম একা উড়াল দেবেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম। সেই খবরে রাজশাহীর উপশহরের আশ্রয় ভবনের বাসায় খুশির বন্যা বয়ে যায়। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের মুখে তখন গর্ব আর আনন্দের ঝিলিক। মা-বাবা, বোন-ভগ্নিপতি সকলে প্রিয়জনের স্বপ্নপূরণের দিনে ছড়িয়ে দিচ্ছিলেন শুভকামনা।

কিন্তু দুপুর পেরোতেই বদলে গেল সব কিছু, পরিবারের আনন্দ নিমিষেই বিষাদে রূপ নিল। উত্তরা দিয়াবাড়িতে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফ-৭ বিজেআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর এসে পৌঁছায়। জানা যায়, বৈমানিকসহ প্রাণ হারিয়েছেন ২০ জন, আহত দেড় শতাধিক।

পরিবারের আশঙ্কা বাড়তে থাকে—আরও বড় দুর্ঘটনার ইঙ্গিত পেতে শুরু করেন তারা। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই রাজশাহীর উপশহরে তৌকিরের বাসার সামনে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। কেউ জড়ো হচ্ছেন জানার আশায়, কেউ বা সমবেদনা জানাতে। ভেতর থেকে ভেসে আসছে কান্নার রোল। বাইরে দাঁড়িয়ে স্বজনদের কষ্টের কথা জানান দিচ্ছেন মামা মোতাকাব্বির।

তৌকির ইসলামের ডাকনাম ছিল ‘সাগর’। পৈতৃক বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে হলেও তারা থাকতেন রাজশাহী নগরের ভাড়া বাসায়। বাবা তহুরুল ইসলাম আমদানি–রপ্তানির ব্যবসায়ী, মা সালেহা খাতুন গৃহিণী। সেদিন দুপুর পর্যন্ত পরিবারের বিশ্বাস ছিল—তৌকির ঢাকার সিএমএইচে চিকিৎসাধীন। তাকে দেখার জন্য বিকেলে বিমানবাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টারে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন মা-বাবা, বোন ও ভগ্নিপতি।

তবে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে এসে নিশ্চিত হয় পরিবার—তৌকির আর নেই। স্বপ্নের আকাশে প্রথম একা ওড়ার দিনই জীবন ফুরিয়ে গেল তৌকির ইসলামের। গর্বের সকালটা ডুবে গেল অসহনীয় এক সন্ধ্যায়।