
রাজধানীর উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ চত্বরে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ বহু মানুষ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের অনেকে গুরুতর পোড়া আঘাত নিয়ে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এই রোগীদের শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে পোড়া রোগীদের ইনফেকশন প্রতিরোধে সাতটি পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. তাসনিম জারা।
সোমবার (২১ জুলাই) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এসব পরামর্শ দেন।
ডা. তাসনিম জারা বলেন, “আজকের দুর্ঘটনায় অনেক শিশুও গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় রোগীর জীবন রক্ষার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে ইনফেকশন থেকে তাকে রক্ষা করা।”
তিনি আরও বলেন, “পোড়ার পরের সংক্রমণ সাধারণ সংক্রমণের মতো নয়। এটি অনেক বেশি মারাত্মক হতে পারে। কারণ ত্বকের বাইরের স্তর—যা আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় সুরক্ষা-পর্দা—পোড়ার কারণে ধ্বংস হয়ে যায়। তখন জীবাণুরা সহজেই শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণ ছড়িয়ে দিতে পারে।”
এমন অবস্থায় সাধারণ মানুষও চাইলেই সহায়তা করতে পারে, তবে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। নিচে ডা. তাসনিম জারার দেওয়া সাতটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ তুলে ধরা হলো:
১. দগ্ধ রোগীর আশপাশে ভিড় করা থেকে বিরত থাকুন। যেতেই হলে অবশ্যই ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। রোগীর বিছানা বা জিনিসপত্রে স্পর্শ না করাই ভালো। সম্ভব হলে গ্লাভস, মাস্ক ও গাউন ব্যবহার করুন।
২. ৭০ শতাংশ অ্যালকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। কেউ দেখতে এলে তাকে রোগীর বিছানায় না বসতে বলুন।
৩. পোড়া স্থানে ডিম, টুথপেস্ট বা ঘরোয়া কোনো কিছু লাগাবেন না। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়।
৪. ড্রেসিংয়ের আগে-পরে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে। যদি নিজে ড্রেসিং করতে হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসক বা নার্সের কাছ থেকে পদ্ধতি শিখে নিন। না জেনে করা বিপজ্জনক।
৫. ড্রেসিংয়ের সময় দগ্ধ স্থানে ফোলাভাব, ব্যথা বা পুঁজ দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসককে জানান।
৬. যেসব রোগীর শ্বাসনালী দগ্ধ হয়েছে, তাদের শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৭. রোগীর টিটেনাস টিকা দেওয়া আছে কি না তা নিশ্চিত করুন। না থাকলে চিকিৎসককে জানাতে হবে।
ডা. তাসনিম বলেন, এই তথ্যগুলো এখনই জানা জরুরি। কারণ, আজ যারা হাসপাতালে দগ্ধ অবস্থায় আছে, তাদের অনেকের জীবন বাঁচাতে আপনি-আমি সবাই ভূমিকা রাখতে পারি—শুধু একটু সচেতন হলেই।