রবিবার । ডিসেম্বর ৭, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক বিনোদন ২৩ জুলাই ২০২৫, ১২:৪৭ অপরাহ্ন
শেয়ার

এই সুপারস্টার ছিলেন শ্রীদেবীর প্রেমে পাগল, কুসংস্কারের কারণে করেননি প্রকাশ


যখন হিন্দি চলচ্চিত্রের প্রথম নারী সুপারস্টার প্রসঙ্গে আলোচনা হয়, তখন শ্রীদেবীর নাম সবার আগে আসে। দক্ষিণ ভারতীয় চলচ্চিত্র দিয়ে যাত্রা শুরু করে তিনি অল্প সময়েই বলিউডে নিজের জায়গা করে নেন এবং হয়ে ওঠেন ঘরের পরিচিত নাম। ‘চালবাজ’, ‘লমহে’, ‘জুদাই’ এবং ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’র মতো ছবিতে তার অনবদ্য অভিনয় আজও দর্শকের হৃদয়ে গেঁথে আছে। তবে তার সহশিল্পীদের মধ্যে একজনই সবচেয়ে বেশি সিনেমায় ছিলেন তার বিপরীতে—রজনীকান্ত। এই দুই তারকা একসঙ্গে ১৯টি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন, যা ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় এক জুটি হিসেবে বিবেচিত হয়।

একটা অদ্ভুত শুরু: প্রথম ছবিতেই মা-ছেলের চরিত্রে

শ্রীদেবী ও রজনীকান্ত প্রথম একসঙ্গে অভিনয় করেন ১৯৭৬ সালের তামিল ছবি ‘মুন্দ্রু মুদিচু’-তে, যা পরিচালনা করেন কে. বালাচন্দার। তখন শ্রীদেবীর বয়স মাত্র ১৩ বছর, আর তিনি সেখানে রজনীকান্তের সৎমায়ের চরিত্রে অভিনয় করেন! আর রজনীকান্ত সেই ছবিতে তার ‘ছেলে’। এই অদ্ভুত সম্পর্ক দিয়েই শুরু হয়েছিল তাদের দীর্ঘ ও স্মরণীয় জুটির পথচলা। বয়সের ব্যবধান এবং চরিত্রের অস্বাভাবিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও, পর্দায় তাদের রসায়ন ছিল চোখে পড়ার মতো।

১৯টি সিনেমা আর এক দৃঢ় বন্ধন

শুধু তামিল নয়, এই জুটি কাজ করেছেন হিন্দি, তেলেগু ও কন্নড় ভাষার ছবিতেও। একসঙ্গে মোট ১৯টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তারা। শুধু পর্দায় নয়, পর্দার বাইরেও তাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বলে শোনা যায়। রজনীকান্ত নাকি শ্রীদেবীর জীবনে এক ধরনের রক্ষাকর্তার ভূমিকায় ছিলেন এবং তার পরিবারের, বিশেষ করে শ্রীদেবীর মায়ের, খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রজনীকান্ত শ্রীদেবীর প্রতি গভীর ভালোবাসা অনুভব করতে থাকেন। এমনকি শোনা যায়, তিনি নাকি শ্রীদেবীর পরিবারকে বলেছিলেন, ১৬ বছর বয়স হলে তিনি তাকে বিয়ে করতে চান।

যে প্রস্তাব আর দেওয়া হলো না

ইন্ডিয়া ডট কম এর এক প্রতিবেদনে নির্মাতা কে. বালাচন্দার জানিয়েছেন, একবার রজনীকান্ত শ্রীদেবীর বাড়িতে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে গিয়েছিলেন। তখন শ্রীদেবী ছিলেন তার থেকে ১৩ বছরের ছোট। সেই সময় ছিল তাদের নতুন বাড়ির গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠান। কিন্তু রজনীকান্ত পৌঁছানো মাত্রই হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়, ঘর অন্ধকারে ঢেকে যায়। এই অপ্রত্যাশিত ঘটনা বদলে দেয় সব কিছু।

চিরস্থায়ী এক বন্ধুত্ব

রজনীকান্ত কখনোই তার ভালোবাসার কথা প্রকাশ করেননি, তবে শ্রীদেবীর সঙ্গে তার বন্ধুত্ব রয়ে গিয়েছিল আজীবন। ২০১৮ সালে শ্রীদেবীর আকস্মিক মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেই সম্পর্ক অটুট ছিল। এরই মধ্যে শ্রীদেবী ১৯৯৬ সালে প্রযোজক বনি কাপুরকে বিয়ে করেন এবং নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেন। অপরদিকে, রজনীকান্ত ১৯৮১ সালে লতা রজনীকান্তকে বিয়ে করেন। পথ আলাদা হলেও একে অপরের প্রতি সম্মান ও মমতা কখনোই ফিকে হয়নি। যদিও রজনীকান্ত কখনোই তার ভালোবাসার কথা জনসমক্ষে বলেননি, তবে তার ঘনিষ্ঠরা জানতেন—শ্রীদেবী তার জীবনে কতটা বিশেষ ছিলেন।

একটি অন্ধকার মুহূর্ত, আর না বলা ভালোবাসা

রজনীকান্ত প্রচণ্ড কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন বলে পরিচিত। তাই শ্রীদেবীর বাড়িতে গিয়ে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়াকে তিনি অশুভ সংকেত মনে করেন। সেই কারণেই প্রস্তাব আর দেওয়া হয়নি। নীরবে চলে যান তিনি। সেই এক মুহূর্তের অন্ধকার তাকে বোঝায়, এই সম্পর্ক হয়তো তার জন্য নয়। তারপর কখনোই তিনি বিষয়টি আর তোলেননি। তার অনুভূতি থেকে যায় হৃদয়ে, জানা ছিল শুধু কাছের মানুষদের।

সূত্র: টাইমস আব ইন্ডিয়া