
চলচ্চিত্রের রঙিন দুনিয়ায় অভিনেতা-অভিনেত্রীরা থাকেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে, কিন্তু একজন শক্তিশালী কাহিনির পেছনে থাকেন যিনি, সেই লেখকদের অবদান প্রায়ই থেকে যায় আড়ালে। এমনই একজন লেখক হলেন শাগুফতা রফিক, যার বাস্তব জীবন একেবারে সিনেমার মতোই চমকপ্রদ ও হৃদয়বিদারক।
বলিউডের জনপ্রিয় সিনেমা ‘হু লামহে’, ‘মর্ডার-২, ‘জান্নাত-২’, ‘আশিকি-২’, ‘জিসম-২’ ও ‘রাজ-৩’–এর চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনিই। ইমরান হাশমি ও আদিত্য রায় কাপুরের মতো তারকাদের জন্য তিনি লিখেছেন বহু হিট ছবি। কিন্তু গ্ল্যামারের এই দুনিয়ায় প্রবেশের আগে তার জীবন ছিল লড়াই, বঞ্চনা ও অপমানের এক দীর্ঘ অধ্যায়।

শৈশব থেকেই সংগ্রামী জীবন শুরু
শাগুফতা রফিককে দত্তক নিয়েছিলেন এক নারী, যিনি কলকাতার এক ধনী ব্যবসায়ীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তবে সেই সম্পর্ক কোনোদিন স্বীকৃতি পায়নি। ব্যবসায়ীর মৃত্যুর পর তার দ্বিতীয় পরিবার—শাগুফতাসহ—পরিণত হয় অনাহারী ও অবহেলিত পরিবারে। তখন শাগুফতার বয়স মাত্র ১১ বছর। সেসময় থেকেই তিনি গোপন পার্টিতে নাচ শুরু করেন, যাতে নিজের পালক মায়ের মুখে দু’বেলা খাবার তুলে দিতে পারেন।
প্রতি রাতে আয় হতো প্রায় ৭০০ রুপি, অথচ পুরো মাস চলতো মাত্র ৫০০-রুপিতে। এই সময় সম্পর্কে একবার আল জাজিরা-কে শাগুফতা বলেন, “এই অভিজ্ঞতা আমাকে খুব তাড়াতাড়ি বুঝিয়ে দেয়, নারীরা কতটা দুর্বল এবং অর্থই নির্ধারণ করে কারা সম্মানিত আর কারা নয়।”
১৭ বছরেই জীবনের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায়
মাত্র ১৭ বছর বয়সে শাগুফতা জড়িয়ে পড়েন এক ধনীর সঙ্গে, যিনি তাকে নিজের রক্ষিতা হিসেবে রাখেন। এই সম্পর্ককে তিনি বলেন, “জীবনের সবচেয়ে নিচু পর্যায়”। অর্থনৈতিক নিরাপত্তার খোঁজে তিনি কয়েক বছর এই মানসিক দাসত্বের মধ্যে থেকে যান।

শেষ পর্যন্ত সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার পর তিনি পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য হন। এরপর জীবিকা নির্বাহের জন্য বার ডান্সার হিসেবে কাজ শুরু করেন।
তিনি বলেন, “এটা ছিল এক ভয়ংকর দুষ্টচক্র। এক বন্দিত্ব থেকে পালাতে গিয়ে গেলাম পতিতাবৃত্তিতে, সেখান থেকে পালাতে গিয়ে বারে নাচতে শুরু করলাম, সেখান থেকে পালাতে গিয়ে দুবাইয়ে চলে গেলাম—এভাবেই চলতে থাকে।”
বলিউডে প্রত্যাখ্যান ও হতাশা
জীবনের দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্যেও শাগুফতার মধ্যে জন্ম নেয় গল্প বলার প্রবল ইচ্ছা। তবে বলিউডের দরজা তার জন্য সহজে খোলেনি। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা অভিজ্ঞতা না থাকায় একের পর এক প্রোডাকশন হাউস ও টিভি চ্যানেল তাকে ফিরিয়ে দেয়।
তার কথায়, “আমি বিভিন্ন প্রোডাকশন হাউসে যেতাম, টিভি শো-তেও গিয়েছি, কিন্তু কেউ কাজ দিতে চায়নি, কারণ আমার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না।”

‘বিশেষ ফিল্মস’-এর হাত ধরে নতুন জীবন
পরবর্তীতে তিনি মহেশ ভাটের ‘বিশেষ ফিল্মস’-এ কাজ করার সুযোগ পান। সেখান থেকেই তার জীবন মোড় নেয় অন্যদিকে। তার প্রতিভার স্বীকৃতি মেলে এবং তিনি লিখে ফেলেন বলিউডের একের পর এক হিট সিনেমার চিত্রনাট্য।
শাগুফতা রফিকের জীবন কাহিনি নিজেই যেন একটি হৃদয়ছোঁয়া চলচ্চিত্র। পতিতাবৃত্তি থেকে বলিউডের অন্যতম সফল চিত্রনাট্যকার হয়ে ওঠা—এ এক সংগ্রামের, সাহসের আর সম্মানের গল্প।
সূত্র: ডিএনএ ইন্ডিয়া