
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভরে রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারী। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এক মামলায় আরেক সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের পাঁচ পৃষ্ঠার জবানবন্দিতে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য। গত ২৪ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জবানবন্দি দেন তিনি।
জবানবন্দিতে সাবেক আইজিপি মামুন জানান, গুম, নির্যাতন, ক্রসফায়ারের নির্দেশনা আসত প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে। সরাসরি নির্দেশনা দিতেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক সিদ্দিক। কাউকে উঠিয়ে আনা, গুম করার মতো বিষয়গুলো তারিক সিদ্দিক সরাসরি গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতেন। পুলিশের আইজি হওয়ার পরও তাকে (মামুন) এ ব্যাপারে সবকিছু অবহিত করা হতো না।
মামুন আরও বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ হারুনকে জিন বলে ডাকতেন। কারণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর মনে করা হতো হারুনকে।
জুলাই আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার থেকে গুলির বিষয়েও জবানবন্দি দেন মামুন। তিনি বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের নজরদারি, গুলি করে ভীতিকর পরিবেশ তৈরির গোপন পরিকল্পনা হয়। র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক হারুন অর রশিদের পরিকল্পনায় মূলত রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত বছর ১৯ জুলাই থেকে প্রায় প্রতিরাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বাসায় বৈঠক হতো। বৈঠকে দু’জন সচিব, এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিবির হারুন, র্যাবের মহাপরিচালক, আনসারের ডিজি, এনটিএমসির জিয়াউল আহসানসহ অনেকে উপস্থিত থাকতেন। মূলত এ বৈঠক থেকে সবরকম নির্দেশনা ও পরামর্শ দেওয়া হতো।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রধান আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। এ মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সহযোগী আসামি। সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশ করার শর্তে গত ১০ জুলাই রাজসাক্ষী হিসেবে মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আগামী ৪ আগস্ট ট্রাইব্যুনালে এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।


























