
দেশজুড়ে প্রথমবারের মতো প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে বিনামূল্যে টাইফয়েডের টিকা দেবে সরকার। তবে নির্ধারিত ১ সেপ্টেম্বরের পরিবর্তে এই কর্মসূচি শুরু হবে ১২ অক্টোবর থেকে। ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের এ টিকা দেওয়া হবে।
টিকা পেতে অনলাইনে vaxepi.gov.bd/registration/tcv–এ নিবন্ধন করতে হবে, যেখানে ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন সনদের নম্বর প্রয়োজন হবে। নিবন্ধনের পর জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়েই সরাসরি ভ্যাকসিন কার্ড ডাউনলোড করা যাবে। নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে ১ আগস্ট।
ইপিআই প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আবুল ফজল মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে প্রথম ১০ দিন স্কুল ও মাদ্রাসায় ক্যাম্পের মাধ্যমে এবং পরের ৮ দিন ইপিআই সেন্টারে টিকা দেওয়া হবে। তিনি অভিভাবকদের দ্রুত নিবন্ধনের আহ্বান জানান।
স্বাস্থ্য সচিব সায়েদুর রহমান জানান, কিছু প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ না হওয়া এবং পূজার ছুটির কারণে কর্মসূচির তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি এই টিকাকে “নিরাপদ” বলে উল্লেখ করেন। ইপিআই জানায়, এক ডোজ ইনজেকটেবল টিকা ৩ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দেবে, যা এসেছে গ্যাভি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের সহায়তায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, টাইফয়েড হলো স্যালমোনেলা টাইফি ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, যা সাধারণত দূষিত খাবার বা পানি থেকে হয়। উপসর্গের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, মাথাব্যথা, বমিভাব, ক্ষুধামন্দা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া থাকতে পারে। চিকিৎসা না হলে জটিলতা বা মৃত্যুও ঘটতে পারে। বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর প্রায় ৯০ লাখ মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হন এবং প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ মারা যান।
টিকা নিয়ে কিছু অভিভাবকের শঙ্কা থাকলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভয়ের কিছু নেই। গ্যাভি সিএসও স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ার ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, “এটি শতভাগ নিরাপদ টিকা। আগে দেশে কেবল বেসরকারিভাবে দেওয়া হতো, এবার সরকার বিনামূল্যে প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে দেবে।”
ডা. আবুল ফজল মো. শাহাবুদ্দিন খানও জানান, যেকোনো ওষুধের মতো সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, তবে বড় কোনো ঝুঁকি নেই। ডব্লিউএইচও টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিভি)–কে শিশুদের রুটিন টিকাদান কর্মসূচিতে অগ্রাধিকার দিয়েছে, কারণ এটি দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা ও উন্নত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেয়।
সংস্থাটি বলছে, টিকাদানের পাশাপাশি স্বাস্থ্য শিক্ষা, নিরাপদ পানি, উন্নত স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণও টাইফয়েড নিয়ন্ত্রণে জরুরি।