রবিবার । ডিসেম্বর ৭, ২০২৫
মাহবুব কিংশুক বিনোদন ২৪ অগাস্ট ২০২৫, ৫:০১ অপরাহ্ন
শেয়ার

ইতিহাসে আছে জয় ও পরাজয়- কোনপথে থালাপতি বিজয়!


Cover pic

ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্য দেশটির অন্যান্য রাজ্যগুলো থেকে রাজনৈতিকভাবে অনেকখানি আলাদা। অন্তত দুটি দিকে দিয়েতো সম্পূর্ণই আলাদা রাজনৈতিক সংষ্কৃতি তামিলনাড়ুর।

প্রথমত ১৯৬৭ সালের পর থেকে বিগত ৫৮ বছর ধরে রাজ্যটি শাসন করছে স্থানীয় সব রাজনৈতিক দল। কংগ্রেস কিংবা বিজেপির মতো সর্বভারতীয় দল সেখানকার ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ভারতের আর কোনো রাজ্যে এমনটা ঘটেনি।

১৯৫২ থেকে প্রথম তিন নির্বাচনে ভারতীয় ন্যাশনাল কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকলেও এরপর আর তামিলনাড়ুর ক্ষমতায় যেতে পারেনি। অন্যদিকে আরেক ন্যাশনাল পার্টি বিজেপি’র অবস্থা রীতিমতো ভয়াবহ। ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলটি এখন পর্যন্ত তামিলনাড়ুতে নিজেদের পায়ের তলায় মাটিই খুঁজে পায়নি। ক্ষমতায় যাওয়া তো দূর কি বাত!

এবার দ্বিতীয় কারণে আসা যাক। গেলো ৫৮ বছর রাজ্যটিতে যারা মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তাদের প্রায় অধিকাংশই এসেছেন ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রি থেকে। লেখক থেকেও মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার এবং সফল রাজনৈতিক দল গঠনের ইতিহাস আছে।

এম করুণানিধিকে দিয়ে শুরু। লেখক থেকে রাজনীতিতে আসা করুণানিধি সর্বোচ্চ সময় (প্রায় ২০ বছর) তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল ডিএমকে (দ্রাবিড় মুন্নেত্রা কাজঘাম) বর্তমানে তামিলনাড়ুর ক্ষমতাসীন দল। মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন তার ছেলে এম কে স্ট্যালিন।

Inner pic 1

এম করুণানিধি, জয়ারাম জয়ললিতা ও এম জি রামাচন্দ্রন

১৯৭৭ সালে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী হন এম জি রামাচন্দ্রন। তিন দফায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনি। রাজনীতিতে আসার আসে রামাচন্দ্রন ছিলেন তামিল ইন্ড্রাস্টির বিখ্যাত অভিনেতা, পরিচালক এবং প্রযোজক।

জয়ললিতার কথাতো আমাদের অনেকেরই জানা। তামিল ছবির তুমুল জনপ্রিয় নায়িকা থেকে নাম লেখান রাজনীতিতে, গঠন করেন নিজের দল এআইডিএমকে (অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাবিড় মুনেত্রা কাজঘাম)। তুমুল সাফল্য পান জয়ললিতা। ছয়বার হন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী।

ফাঁকে স্বল্প মেয়াদে আরও দুজন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন- জানাকি রামচন্দ্রন এবং ভি আর নেদুনচেজিয়ান। জানাকি রামচন্দ্রন ছিলেন তামিল ছবির অভিনেত্রী এবং ভি আর নেদুনচেজিয়ান ছিলেন একজন লেখক।

এ থেকেই বোঝা যায় তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে ফিল্ম স্টাররা কতটা প্রভাব রাখেন। ফলে সেখানকার মুভি স্টারদের চোখ বরাবরই রাজনীতির দিকেও থাকে।

এম করুণানিধি, এম জি রামাচন্দ্রন এবং জয়ারাম জয়ললিতার পরও আরও দুজন তামিল সুপারস্টার রাজ্যের রাজনীতিতে নাম লেখান। তাদের একজন তামিল ছবির সর্বকালের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেতা রজনীতান্ত এবং সুপারস্টার কমল হাসান। রজনীকান্ত যদিও রাজনীতিতে নামার ঘোষণা দিয়েও পরবর্তীতে শারীরিক কারণ দেখিয়ে এক পর্যায়ে পিছু হটেন। তবে কমল হাসান এখনো আছেন রাজনীতির ময়দানে। যদিও পূর্বসূরীদের মতো তিনি সাফল্য পাননি। ব্যর্থই বলা চলে।

সাম্প্রতিককালের রজনীকান্ত, কমল হাসানের পর এবার সেই দলে যোগ দিলেন তামিল সিনেমার আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা থালাপতি বিজয়। গেলো ফেব্রুয়ারিতে গঠন করেছেন নিজের রাজনৈতিক দল ‘তমিজহাগা ভেট্রি কাজগাম’।

Inner pic 2

কমল হাসান ও রজনীকান্ত

তামিল ভাষায় ‘থালাপতি’ শব্দের অর্থ কমান্ডার। তো সিনেমার অত্যন্ত প্রভাবশালী কমান্ডার বিজয় কি রাজনীতির মাঠে জয়লাভ করতে পারবেন?

ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রির জনপ্রিয়তাকে পূঁজি করে তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে সফল হওয়ার একাধিক উদহারন যেমন আছে তেমনি আছে ব্যর্থতার ইতিহাসও। কমল হাসানের কথা আগেই বলা হয়েছে। রজনীকান্তকেও সফল বলা যাবেনা। কারণ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে তিনি সরে যান রাজনীতি থেকে। তালিকায় আছে আরও কিছু নাম। জনপ্রিয় পরিচালক সীমান ২০০৯ সালে তামিল জাতীয়তাবাদী দল- তামিল কাচি (এনটিকে) গঠন করেছিলেন। কিন্তু পুরোপুরি ব্যর্থ হন।

অর্থাৎ থালাপতি বিজয়ের সামনে চান্স ফিফটি-ফিফটি। তার সামনে সফলতার গল্প যেমন আছে, আছে ব্যর্থতার নজিরও। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে তার দুটি জনসভায় তুমুল জনস্রোত তাকে এবং তার সমর্থকদের আশাবাদী করে তুলছে। তবে রাজনীতিতে একটা কথা সবসময় মাথায় রাখতে হয়- জনসভার সব মানুষই আপনার ভোটার নয়। পর্দায় আপনাকে দেখে যে তালি দেয় ভোটের মাঠে সেই ব্যক্তি আপনাকে ভোট নাও দিতে পারে।

২০২৬ এ তামিলনাড়ুতে ভোট। তখনই বোঝা যাবে বিজয়ের নাম কাদের সাথে যুক্ত হবে- করুণানিধি, রামাচন্দ্রন, জয়ললিতার সাথে নাকি রজনীকান্ত আর কমল হাসানের পাশে!