
প্রতি বছর জাতিসংঘ একটি তালিকা প্রকাশ করে যেখানে দেখা যায় বিশ্বের কোন দেশগুলোতে মানুষ তাদের জীবনের প্রতি সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে। গবেষণার উদ্দেশ্য হলো—কোন বিষয়গুলো মানুষকে আসলে সুখী করে তা খুঁজে বের করা, যাতে সেসব নীতি প্রণয়ন করা যায় যা জনগণের কল্যাণ বাড়ায়। ভ্রমণপ্রেমীদের জন্যও এটি বেশ কাজে দেয়—২০২৫ সালে কোথায় ভ্রমণে যাওয়া যায়, তা বেছে নিতে এ তথ্য বেশ উপকারী।
সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট ২০২৫ সালের ২০ মার্চ (বিশ্ব সুখ দিবস) প্রকাশিত হয়েছে। এটি তিন বছরের গড়ের ভিত্তিতে তৈরি, যেখানে মানুষ তাদের জীবনমান কেমন মনে করছে তা জানানো হয়েছে। সুখের ওপর প্রভাব ফেলে এমন ছয়টি বিষয়কে এখানে ধরা হয়েছে: সামাজিক সহায়তা, আয়, স্বাস্থ্য, স্বাধীনতা, উদারতা এবং দুর্নীতির অনুপস্থিতি। একইসাথে একটি দেশের ভেতরে সুখের বণ্টন কেমন তা-ও দেখা হয়। দেখা গেছে, যেখানে “সুখের ফাঁক” কম—অর্থাৎ মানুষ সমানভাবে ওই ছয়টি উপাদানের সুবিধা পাচ্ছে—সেই দেশগুলো সামগ্রিকভাবে বেশি সুখী।
তবে সুখ মাপা সহজ কাজ নয়—এটি ব্যক্তিগত ও সামাজিক নানা বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়। এ বছর রিপোর্টে বিশেষভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে পরোপকারী কাজের উপকারিতা, যেমন—দান করা, স্বেচ্ছাসেবক হওয়া, কিংবা অচেনা মানুষকে সাহায্য করা। গবেষণায় দেখা গেছে, “অন্যের কাছ থেকে সদয় ব্যবহার প্রত্যাশা করা” এবং একটি “সহানুভূতিশীল সমাজে থাকা”—সুখের শক্তিশালী পূর্বাভাসক। ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে হঠাৎ করে পরোপকারী কাজ বেড়ে যায়—বিশেষ করে অচেনা মানুষকে সাহায্য করার প্রবণতা। যদিও ২০২৪ সালে এ প্রবণতা কিছুটা কমেছে, তবুও ২০১৭–১৯ সালের তুলনায় এখনো ১০% বেশি রয়েছে। গবেষকদের আশা—এই ধারা চলতে থাকবে, কারণ “মানুষ যখন পারস্পরিক যত্নশীল সম্পর্কে জড়িত থাকে তখনই সুস্থতা বাড়ে।”
বিশ্বের যেখানেই থাকুন, বন্ধুত্ব তৈরি করা, একসাথে খাবার খাওয়া, আর অন্যদের সাথে বসবাস করা—এসবকেও রিপোর্টে সুখ বাড়ানোর গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে ধরা হয়েছে। নিচে দেওয়া হলো ২০২৫ সালের সবচেয়ে সুখী দেশগুলোর তালিকা।

গবেষণাটি কীভাবে কাজ করে?
ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট মূলত অংশগ্রহণকারীদের স্ব-মূল্যায়নের ওপর নির্ভর করে। তারা নিজেদের জীবনকে ক্যানট্রিল স্কেলে রেট করে—যেখানে মইয়ের শীর্ষে ১০ মানে সর্বোচ্চ সুখী আর নিচে ০ মানে একেবারেই অসুখী।
পরে গবেষকরা বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করে দেখেন কোন কারণে বিভিন্ন দেশের গড় সুখের তারতম্য হয়। বিশেষজ্ঞরা মূল ছয়টি উপাদান (সামাজিক সহায়তা, আয় ইত্যাদি) দিয়ে ফলাফল ব্যাখ্যা করেন, তবে মনে রাখা দরকার—এটি নির্ভর করে মানুষ যখন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে তখন তাদের অভিজ্ঞতার ওপর। তাই এটি সবসময় সাম্প্রতিক রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক বা সামাজিক ঘটনার প্রতিফলন নাও হতে পারে।
পুরো লেখাটির অডিও শুনতে নিচে ক্লিক করুন-
বিশ্বের সবচেয়ে সুখী ৫ দেশ কী কারণে সুখী?
বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ কোনটি?
আবারও নর্ডিক দেশগুলো তালিকার শীর্ষে। ২০২৫ সালে ফিনল্যান্ড টানা অষ্টমবারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র কি তালিকায় আছে?
যুক্তরাষ্ট্র এবার সুখের তালিকায় ইতিহাসের সবচেয়ে নিচে নেমে গেছে—২৪তম স্থানে। দেশটিতে “ডেথস অব ডিসপেয়ার” (আত্মহত্যা ও মাদকাসক্তির কারণে মৃত্যু) এখনো অনেক বেশি এবং তা ক্রমেই বাড়ছে। অথচ বিশ্বজুড়ে ২০০০ সাল থেকে অন্তর্ভুক্ত ৫৯টি দেশের মধ্যে ৭৫%-এ এসব মৃত্যু কমেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য তালিকায় পিছিয়ে গেলেও, কোস্টারিকা (৬) এবং মেক্সিকো (১০) শীর্ষ দশে উঠেছে। লিথুয়ানিয়া, যেটি গত বছর ৩০ বছরের নিচে জনগোষ্ঠীর সুখে শীর্ষে ছিল, এবারও উন্নতি করেছে। একইভাবে স্লোভেনিয়া ও চেকিয়াও র্যাঙ্কিংয়ে উপরে উঠেছে।
বাংলাদেশের অবস্থান কততম?
সুখী দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৪ তম। সবচেয়ে অসুখী দেশগুলোর ভেতর বাংলাদেশের অবস্থান ১৫ তম। এর কারণ হিসেবে বেকারত্ব, দুর্নীতি, মত প্রকাশের স্বাধীনতার অভাব, একাকীত্ব- ইত্যাদি কারণ প্রকাশ পেয়েছে।
২০২৫ সালের বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ সুখী দেশ

ছবি: গেইটি ইমেজেস
৫. নেদারল্যান্ডস
২০২৪ সালের ষষ্ঠ স্থান থেকে এক ধাপ এগিয়ে পঞ্চম স্থানে এসেছে নেদারল্যান্ডস। বিশেষত দেশটির “উদারতা” রেটিং খুবই উঁচু। আমস্টারডাম বরাবরই বসবাস বা ভ্রমণের জন্য অসাধারণ জায়গা—বিশ্বমানের গ্যালারি ও জাদুঘর, সুন্দর পাথরের রাস্তা, সাইক্লিং সংস্কৃতি, আর ক্রমবর্ধমান হোটেল ও রেস্টুরেন্ট দৃশ্যের জন্য খ্যাত।

ছবি: গেইটি ইমেজেস
৪. সুইডেন
চতুর্থ স্থান ধরে রেখেছে সুইডেন। এখানে ভালো শাসনব্যবস্থা, শক্তিশালী সামাজিক সহায়তা ও দীর্ঘায়ু সুস্থ জীবনযাপন দেখা যায়। দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রগতিশীল দেশগুলোর একটি, বিশেষত লৈঙ্গিক অধিকার ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে।

ছবি: গেইটি ইমেজেস
৩. আইসল্যান্ড
বিশ্বের দেশগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়—কমন-ইন্টারেস্ট, স্পেশাল-ইন্টারেস্ট, আর দুর্বল রাষ্ট্র। “কমন-ইন্টারেস্ট” রাষ্ট্রগুলো নানান জনকল্যাণমূলক নীতি গ্রহণে সক্ষম, যা সুখ বাড়ায়। এ সক্ষমতা মাপা হয়—রাজস্ব সংগ্রহ, সেবা প্রদান, দমন-পীড়ন বা গৃহযুদ্ধ এড়ানো ইত্যাদি দ্বারা। এ সবকিছু জীবনের সন্তুষ্টির সাথে সম্পর্কিত।
আইসল্যান্ড একটি কমন-ইন্টারেস্ট রাষ্ট্র, যেখানে গড় জীবন সন্তুষ্টি দুর্বল রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় দুই পয়েন্ট বেশি। অন্যান্য নর্ডিক দেশগুলোর মতো (ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে ও সুইডেন) এখানেও সুখ ও সমতার মাত্রা খুবই উঁচু—আর সমতা মানেই সামগ্রিক সন্তুষ্টি।

ছবি: গেইটি ইমেজেস
২. ডেনমার্ক
শীর্ষ তিনটি দেশই নর্ডিক অঞ্চলের। ডেনমার্ক এবারও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, যেমন ছিল গত দুই বছর। যদিও প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানের ফারাক কিছুটা বেড়েছে। দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কর আদায়কারী দেশগুলোর একটি, তবে এর বিনিময়ে জনগণ পায় উচ্চমানের সরকারি সেবা।

ছবি:গেইটি ইমেজেস
১. ফিনল্যান্ড
টানা অষ্টমবারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ড। এখানকার উদারতা (যেমন—হারানো ওয়ালেট ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা), আয়, স্বাধীনতা, শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং গড় আয়ু—এসব মিলিয়ে দেশটি বারবার শীর্ষে উঠে আসে।




























