মানিকগঞ্জে ঘটেছে এক অনন্য ঘটনা। হাসপাতালের সাদা দেয়াল, ওষুধের গন্ধ আর স্ট্রেচারের শব্দের মাঝেই গড়ে উঠল বিয়ের আসর। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায়ই হাসপাতালের ভেতর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলেন এক হিন্দু যুগল। যেন জীবনের কষ্ট, ব্যথা আর আশার গল্প একসাথে মিলেমিশে তৈরি করেছে ব্যতিক্রমী এক স্মৃতি।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে আফরোজা বেগম জেনারেল হাসপাতালের একটি খালি অংশেই এই ব্যতিক্রমী বিয়ের আয়োজন করা হয়। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত বর আনন্দ সাহার হাত-পা তখনও ব্যান্ডেজে বাঁধা। কিন্তু লগ্নের সময় পেরিয়ে গেলে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা আর সম্ভব হতো না। তাই পরিবার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মিলে আয়োজন করলেন এক অস্বাভাবিক অথচ স্মরণীয় বিয়ে।
আনন্দ সাহার পরিবারের সদস্যরা জানান, ছেলের শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়েই তারা সিদ্ধান্ত নেন। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান মেনে হাসপাতালের ভেতরেই সম্পন্ন হয় বিয়ের সব আয়োজন।
হাসপাতালের মেডিকেল অ্যান্ড ইউনিট হেড ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “রোগী মানিকগঞ্জ সদরের বাসিন্দা। দুর্ঘটনায় তার দুই হাত ও এক পায়ে গুরুতর আঘাত লাগে। আজই ছিল তার বিয়ের লগ্ন। পরিবার বিষয়টি জানালে আমরা গুরুত্ব সহকারে কনসালটেন্টদের সঙ্গে আলোচনা করি। রোগীর অবস্থা আগের তুলনায় স্থিতিশীল মনে হওয়ায় কেবিনে নয়, হাসপাতালের অব্যবহৃত অংশে অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করার অনুমতি দেওয়া হয়।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের কর্তৃপক্ষ সবসময় রোগীদের সেবায় আন্তরিক। রোগীর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও এ আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”
আহত আনন্দ সাহার ব্যান্ডেজ মোড়ানো হাত-পায়ের মাঝেই শোভা পেল বিয়ের শঙ্খধ্বনি, আশীর্বাদের মঙ্গলস্বর। হাসপাতালের পরিবেশে জন্ম নিল এক বিরল উদাহরণ— ভালোবাসা আর অঙ্গীকারের। দুর্ঘটনার যন্ত্রণার মধ্যেও এই বিয়ে প্রমাণ করেছে, জীবন যত কঠিনই হোক, আশার আলো আর ভালোবাসার শক্তি সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়।