
৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হয় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে, তবে নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। কিছু হলে ভোট শুরু হতে দেরি হয়, কোথাও আঙুলে কালি দেওয়া হয়নি, কোথাও ব্যালটে ভুল ছিল। এমনকি সন্ধ্যার পরও কয়েকটি হলে ভোট গ্রহণ চলতে থাকে।
কয়েকটি প্যানেল যন্ত্রে ভোট গণনায় আপত্তি জানানোয় আজ শুক্রবার ভোরে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হাতে গোনা হচ্ছিল ভোট। নির্বাচন কমিশনের সদস্যসচিব অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম গত রাতে জানান, ভোট গণনায় সারা রাত লেগে যাবে, তবে শুক্রবার দুপুর নাগাদ ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে। কমিশনের হিসেবে, এবার ভোট পড়েছে প্রায় ৬৮ শতাংশ।
অভিযোগ ও বর্জন
দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা অভিযোগ তুলতে থাকেন। ১৫ নম্বর ছাত্রী হলে জাল ভোটের অভিযোগে এক ঘণ্টার মতো ভোট বন্ধ থাকে। বিকেল চারটার দিকে ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। পরে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের সম্প্রীতির ঐক্য, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের সংশপ্তক পর্ষদ, স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ এবং ছাত্র ফ্রন্টের একাংশসহ মোট পাঁচটি প্যানেল নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়। কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও বর্জনে সায় দেন।
ছাত্রদল অভিযোগ তোলে, ব্যালট মুদ্রণ থেকে শুরু করে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো পর্যন্ত সবখানে জামায়াত-শিবিরের প্রভাব ছিল। তাদের প্রার্থী ও এজেন্টদের বাধা দেওয়া হয়েছে, আঙুলে দেওয়া কালি সহজে মুছে গেছে এবং জাল ব্যালট ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
অন্যদিকে ছাত্রশিবির-সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা অভিযোগ করেন, ছাত্রদল হেরে যাওয়ার আশঙ্কায় ভোট বর্জন করেছে।

অংশ নেওয়া ও বর্জন করা প্যানেল
জাকসুতে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে আটটি পূর্ণ ও আংশিক প্যানেল। এর মধ্যে ছাত্রদল- সমর্থিত প্যানেল, সম্প্রীতির ঐক্য, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্টের সংশপ্তক পর্ষদ, অঙ্গীকার পরিষদ এবং ছাত্র ফ্রন্টের একাংশ নির্বাচন বর্জন করে। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল ছাত্রশিবির- সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ- সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম ও স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন।
ভোটার ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
মোট ভোটার ছিলেন ১১ হাজার ৭৪৩ জন। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৫ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১৭৭ প্রার্থী। ভিপি পদে ৯ এবং জিএস পদে ৮ জন প্রার্থী ছিলেন। ক্যাম্পাসে মোতায়েন ছিল দেড় হাজার পুলিশ ও আনসার সদস্য। দিনভর কোনো সংঘর্ষের খবর পাওয়া না গেলেও রাতে ছাত্রদল বর্জনের প্রতিবাদে মিছিল করে।
শিক্ষকদের প্রতিক্রিয়া
নির্বাচনী অনিয়মের অভিযোগে দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান বিএনপিপন্থী তিন শিক্ষক। অন্যদিকে অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, শিক্ষার্থীরা যে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব আশা করেছিল, তা এবারও প্রশ্নবিদ্ধ হলো। তিনি এটিকে ‘হতাশাজনক’ বলে মন্তব্য করেন।
৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকলেও দিনভর অনিয়ম, বর্জন আর অভিযোগে শেষ পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া ঘিরে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।