
নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন
নৌ পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, দেশের স্থল, নৌ ও সমুদ্র বন্দসমূহের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজি শীর্ষক একটি জাতীয় কৌশলপত্র তৈরি করছে।
শনিবার (২০ সেপ্টেস্বর) চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মিলনায়তনে আয়োজিত‘ ওয়ার্কশপ অন কাস্টমস এন্ড পোর্ট ম্যানেজমেন্ট : প্রবলেমস, প্রসপেক্টস এন্ড ওয়ে ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘ন্যাশনাল পোর্ট স্ট্র্যাটেজির খসড়া প্রণয়নের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আশা করছি এই বছরের মধ্যেই এই স্ট্র্যাটেজি চূড়ান্তকরণের কাজ শেষ হবে।’
চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য সম্প্রতি বর্ধিত মাশুল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার উক্ত বর্ধিত মাশুল এক মাসের জন্য স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
নৌ উপদেষ্টা আরও বলেন, আমদানি-রপ্তানিকৃত পচনশীল পণ্যদ্রব্য সংরক্ষণের জন্য সরকারের মোংলা বন্দরে একটি কোল্ড চেম্বার করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, সঠিকভাবে সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে মোংলা বন্দরকে একটি আঞ্চলিক বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সাপোর্ট টু সাস্টেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন প্রকল্প (এসএসজিপি) ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. ইউসুফ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান এবং চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার নুসরাত সুলতানা।
কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন ইআরডি সচিব মো. শাহ্রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী সমুদ্র বন্দরসমূহের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশীজনদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠনের আহ্বান জানান।
চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য সম্প্রতি বর্ধিত মাশুল প্রসঙ্গে নৌ পরিবহন সচিব বলেন, সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনের বিভিন্ন শর্তাবলি মেনে চলতে হবে। সমুদ্রবন্দসমূহের দক্ষতা বৃদ্ধি করতেও সংশ্লিষ্ট অবকাঠামোগত খাতে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগের জন্য এই ধরনের মাশুল হতে প্রাপ্ত অর্থ ব্যবহৃত হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহমান খান বলেন, বন্দরে কাস্টমস সংক্রান্ত প্রক্রিয়া আরও গতিশীল করার জন্য সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সমুদ্র বন্দরসমুহে কনটেইনার স্ক্যানার চালু করা হয়েছে এবং অথরাইজড ইকোনমিক অপারেটর ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
ইআরডি সচিব মো. শাহ্রিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতকে পরিবেশগত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শর্তাবলি মেনে চলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, উত্তরণের প্রেক্ষাপটে দেশের মানবসম্পদের দক্ষতা ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস. এম. মনিরুজ্জামান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে কোনও ধরনের কোনও বিঘ্ন সৃষ্টি হলে যাতে বড় ধরনের কোনও সমস্যা না হয় এবং বড় জাহাজ যাতে সহজে বন্দরে প্রবেশ করতে পারে সেই লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের বিকল্প একটি গভীর সমুদ্র বন্দর থাকা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, বন্দরে পণ্য খালাসের প্রক্রিয়া আরও গতিশীল করার লক্ষ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন।
কর্মশালার মূল বিষয়বস্তুর ওপর একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন সাবেক সচিব ও ইআরডি’র এসএসজিপি প্রকল্পের প্রকল্প উপদেষ্টা আবদুল বাকি।
কর্মশালায় উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন ইআরডি’র অতিরিক্ত সচিব ও এসএসজিপি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এ. এইচ. এম. জাহাঙ্গীর।
কর্মশালায় আলোচকবৃন্দ চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য সম্প্রতি আরোপিত বর্ধিত মাশুল পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান। সমুদ্র বন্দরের অফ ডকের ধারণক্ষমতা আরও বৃদ্ধির আহ্বানও জানান তারা।
তারা চট্টগ্রাম বন্দরের পার্শ্ববর্তী এলাকার রাস্তাঘাট মেরামত ও অন্যান্য অবকাঠামো শক্তিশালী করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। একই সঙ্গে তারা বে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ যতদ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করার জন্যও আহ্বান জানান।


























