
প্রতারক মিজানুর রহমান মিন্টু ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন।
কানাডায় উচ্চ বেতনে শ্রমিক ভিসায় পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে যশোরের চার তরুণের কাছ থেকে ৫৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন মিজানুর রহমান মিন্টু ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি খাতুন। প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, টাকা নেওয়ার পর এই দম্পতি যশোর থেকে পালিয়ে নাটোরে গিয়ে নতুন করে অফিস খুলেছেন।
অভিযুক্ত মিন্টু যশোর শহরের চাচড়া চোরমারা দীঘিরপাড় এলাকার আবুল কালামের ছেলে। ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের অভিযোগ, টাকা নেওয়ার পর ওই ব্যক্তি স্ত্রীকে নিয়ে যশোর থেকে পালিয়ে নাটোরে গিয়ে নতুন করে অফিস খুলেছেন। এখন তিনি টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না, ভিসাও দিচ্ছেন না। এ ঘটনায় যশোর ও নাটোর থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
পুলিশের তদন্তে জানা গেছে, এই দম্পতি এর আগে পর্তুগালসহ বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর নামে আরও ৪০ জনের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এই প্রতারক দম্পতির কবলে পড়ে মোট ৪৪টি পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগী বাঘারপাড়া উপজেলার হাবুলগ্রামের নাঈমুল হক নাবিল (২৩) জানান, কানাডায় যাওয়ার স্বপ্নে তিনি মায়ের জমি বিক্রি ও ঋণ নিয়ে ১৫ লাখ টাকা মিন্টুর হাতে দেন। কিন্তু টাকা নেওয়ার পর যশোর অফিস গুটিয়ে নাটোরে চলে যান মিন্টু। ভিসাও দেননি, টাকাও ফেরত দেননি। এ ঘটনায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর নাবিলের ভগ্নিপতি যশোর কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এব্যাপারের যশোর কোতোয়ালি থানার এসআই তাহমুদুল ইসলাম জানান, ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে মামলার কাগজ হাতে পেয়েছেন। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতারণার শিকার আরেকজন, যশোর সদর উপজেলার বাবলুর রহমান, ১৮ সেপ্টেম্বর নাটোর সদর থানায় অভিযোগ করেছেন। তাঁর অভিযোগে বলা হয়, বৈধ পথে শ্রমিক ভিসা দেওয়ার নামে চারজনের কাছ থেকে ৫৮ লাখ টাকা হাতিয়ে মিন্টু নাটোর সদর উপজেলার বড় হরিশপুর এলাকায় ‘ইউরো ভিসা হেল্প সেন্টার বিডি’ নামে নতুন অফিস খুলেছেন। টাকা ফেরত চাইলে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
অন্য ভুক্তভোগীরা হলেন ঝিকরগাছার রাসেল কবির ও মণিরামপুরের মেহেদী হাসান।
নাটোর থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জামাল উদ্দিন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে মিন্টু দেশের বিভিন্ন জেলায় একই কৌশলে অফিস খোলেন। এরপর ২০ থেকে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা হন। বর্তমানে তিনি আত্মগোপনে আছেন। তাঁর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকার মধ্যে ২০ লাখ টাকা চেকের মাধ্যমে ফেরত দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, মিন্টু–বৃষ্টি দম্পতির নেতৃত্বে একটি প্রতারক চক্র কাজ করছে। তারা কানাডা, পর্তুগালসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর নামে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ ভুয়া ভিসার মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলেও পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মিন্টুর ব্যবহৃত দুটি মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সেগুলো বন্ধ পাওয়া গেছে।