
ইসরায়েলের আটক অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে ফের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ। তিনি বলেছেন, “আমাদের বৈশ্বিক ব্যবস্থা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে। গাজায় ভয়াবহ যুদ্ধাপরাধ ঘটছে, অথচ বিশ্ব তা ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছে।”
গত সোমবার ইসরায়েলের আটক অবস্থা থেকে ছাড়া পেয়ে গ্রিসে যাওয়ার পর থুনবার্গ সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের সরকারগুলো যখন তাদের আইনি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে, তখন আমরা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার মাধ্যমে ন্যায়বিচারের পক্ষে পদক্ষেপ নিয়েছি।”
রয়টার্স জানায়, গ্রিসে তিনি ইসরায়েলের গাজায় চলমান সামরিক অভিযান, গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের কঠোর সমালোচনা করেন। তাঁর ভাষায়, “আমি খুব স্পষ্টভাবে বলছি- গাজায় গণহত্যা চলছে। ইসরায়েল একটি পুরো জাতিকে আমাদের চোখের সামনে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে।”
থুনবার্গ আরও জানান, ইসরায়েলের আটক অবস্থায় তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। “আমরা ঘুমাতে পারিনি, আমাদের ওপর নির্যাতন হয়েছে, কিন্তু গল্পটা সেখানে শেষ নয়,” বলেন তিনি।
তিনি অভিযোগ করেন, “গাজায় মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে, আর ইসরায়েল মানবিক ত্রাণ পাঠানোর প্রচেষ্টায় বাধা দিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে।”
২২ বছর বয়সী এই জলবায়ু কর্মী ইসরায়েলের আটক অবস্থা থেকে ছাড়া পেয়ে গ্রিসে পৌঁছালে ফিলিস্তিনপন্থি শত শত মানুষ তাঁকে উল্লাসের সঙ্গে বরণ করে নেয়। গ্রিসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার ১৬১ জন আন্দোলনকারী একটি ফ্লাইটে এথেন্সে এসে পৌঁছান- তাদের মধ্যে ছিলেন গ্রেটা থুনবার্গও।
অন্যদিকে, ইসরায়েল জানায়, তারা থুনবার্গসহ মোট ৭১ জন আন্দোলনকারীকে বহিষ্কার করেছে। জানা যায়, বিশ্বের ৪০টিরও বেশি নৌযানে করে চার শতাধিক মানবাধিকার কর্মী গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ভূমধ্যসাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরায়েলি নৌবাহিনী তাদের নৌযান আটক করে এবং ৪৭৯ জনকে গ্রেপ্তার করে।
ইতোমধ্যে ৩৪১ জন আন্দোলনকারীকে তুরস্ক, গ্রিস ও জর্ডানসহ বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সুইস ও স্প্যানিশ কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, আটক অবস্থায় ইসরায়েল তাদের অমানবিক পরিস্থিতিতে রেখেছিল। কেউ পর্যাপ্ত পানি বা খাবার পাননি, অনেকে মারধরের শিকার হয়েছেন, আবার কেউ খাঁচায় বন্দি ছিলেন। তবে ইসরায়েল এসব অভিযোগ ‘মিথ্যা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
গাজায় অবরোধ ভাঙার উদ্যোগের পর থুনবার্গকে নিয়ে উপহাস করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “গ্রেটা একজন ঝামেলাবাজ। সে এখন আর পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে না, এসব নাটক করছে। ওর চিকিৎসার দরকার- রাগ নিয়ন্ত্রণের সমস্যা আছে।”
থুনবার্গ ও ট্রাম্পের অনলাইন দ্বন্দ্ব বহুদিনের। ২০১৯ সালে ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ব্যক্তি হওয়ার পর ট্রাম্পও তাঁকে ব্যঙ্গ করেছিলেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না।
তবে ট্রাম্পের মন্তব্যের জবাবে ফেসবুকে ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে প্রতিক্রিয়া জানান থুনবার্গ। তিনি লেখেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমার চরিত্র নিয়ে অতিপ্রশংসামূলক মন্তব্য করেছেন। আমার মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে তাঁর উদ্বেগের জন্য আমি কৃতজ্ঞ।”
এরপরেই খানিকটা রসিকতা করে যোগ করেন, “যদি রাগ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তাঁর কোনো পরামর্শ থাকে, আমি তা শুনতে আগ্রহী- কারণ তাঁর নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণের ইতিহাসও বেশ দৃষ্টান্তমূলক!”
ফিলিস্তিনিদের জন্য ত্রাণবাহী গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা যাত্রা করেছিল স্পেন থেকে। তাদের লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলি অবরোধ ভেঙে গাজায় খাদ্য, ওষুধ ও মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু আন্তর্জাতিক জলসীমায় ইসরায়েলি বাহিনী ফ্লোটিলার ওপর অভিযান চালিয়ে নৌযানগুলো জব্দ করে।
এ ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইনের সরাসরি লঙ্ঘন।
সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি, আলজাজিরা, গার্ডিয়ান




























