
১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া বলিউডের ব্লকবাস্টার ছবি ‘খলনায়ক’ ছিল সেই সময়ের অন্যতম আলোচিত সিনেমা। সঞ্জয় দত্ত, মাধুরী দীক্ষিত ও জ্যাকি শ্রফ অভিনীত এই ছবিটি মাত্র ৪ কোটি রুপিতে নির্মিত হলেও আয় করেছিল ২১ কোটি রুপি। কিন্তু ছবির একটি গানই যেন ছাপিয়ে যায় পুরো সিনেমাকে- ‘চোলি কে পিছে কেয়া হ্যায়’।
গানটি মুক্তির পরেই ভারতে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। অলকা ইয়াগনিক ও ইলা অরুণের কণ্ঠে গাওয়া এই গানকে অনেকে আখ্যা দেন ‘অশ্লীল’ ও ‘নারীবিরোধী’ বলে। সামাজিক সংগঠন ও একাংশের দর্শক অভিযোগ তোলেন, গানটি সমাজের নীতি-নৈতিকতার পরিপন্থী।
আদালত পর্যন্ত গড়ায় বিতর্ক
গানটি নিয়ে প্রতিবাদ এতটাই বাড়ে যে বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালতে পৌঁছায়। আবেদনকারীরা সেন্সর বোর্ডকে অনুরোধ করেন, গানটি যেন সিনেমা থেকে বাদ দেওয়া হয় এবং ইতোমধ্যে বিক্রি হওয়া ক্যাসেটগুলোও বাজার থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
তবে আদালতের রায়ে বলা হয়— গানের কথায় আপত্তিকর কিছু নেই। কিন্তু তাতেও থামেনি বিতর্ক। দূরদর্শন ও অল ইন্ডিয়া রেডিও যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, গানটি সম্প্রচার করা হবে না। ফলে টেলিভিশন বা রেডিওতে শোনা যেত না সেই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই গান।
শিবসেনা প্রধানের পক্ষাবলম্বন
বিতর্কের মাঝেই শিবসেনার নেতা বাল ঠাকরে প্রকাশ্যে বলেন, “এই গানে আপত্তিকর কিছু নেই। মানুষ অযথা প্রতিবাদ করছে।” তার এই মন্তব্যের পরও নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে আরও কয়েক মাস।

নিষেধাজ্ঞা পেরিয়ে কিংবদন্তি হয়ে ওঠা
টিভি বা রেডিও থেকে নিষিদ্ধ হলেও ‘চোলি কে পিছে কেয়া হ্যায়’ মানুষের মুখে মুখে ফিরেছিল। ৯০-এর দশকে এটি ভারতের সাংস্কৃতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। সময়ের সঙ্গে গানটি পরিণত হয় এক ‘কাল্ট ক্ল্যাসিক’-এ।
২০২৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ক্রু’ ছবিতে গানটির রিমেক সংস্করণ ‘চোলি কে পিছে ২.০’ আবারও ফিরে আসে নতুন সুরে। কারিনা কাপুর, টাবু ও কৃতি শ্যানন অভিনীত সেই সংস্করণও দর্শকের বিপুল সাড়া পায়।
তিন দশক পরও জীবন্ত এক স্মৃতি
আজও এই গানটি মাধুরী দীক্ষিতের ক্যারিয়ারের অন্যতম স্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে রয়ে গেছে। তার নাচ, অভিব্যক্তি ও সুভাষ ঘাইয়ের সৃজনশীল উপস্থাপনা গানটিকে বলিউড ইতিহাসে অমর করে তুলেছে।
নিষিদ্ধ হয়েও যে গান প্রজন্মের পর প্রজন্মকে মুগ্ধ করেছে— ‘চোলি কে পিছে কেয়া হ্যায়’ নিঃসন্দেহে তারই এক অনন্য উদাহরণ।
তথ্যসূত্র: ডিএনএ, আইএমডিবি