রবিবার । ডিসেম্বর ৭, ২০২৫
বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক আন্তর্জাতিক ৮ অক্টোবর ২০২৫, ৭:৪৮ অপরাহ্ন
শেয়ার

সোনম ওয়াংচুক: ভারতের নায়ক থেকে হঠাৎ ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’


Sonam Wangchuk

সোনম ওয়াংচুক

একসময় যিনি ছিলেন উদ্ভাবন, শিক্ষা সংস্কার ও পরিবেশ সচেতনতার প্রতীক, সেই সোনম ওয়াংচুক আজ ভারতের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে কারাগারে বন্দি। লাদাখের সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসন ও রাজ্যের মর্যাদা পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার পর তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে কর্তৃপক্ষ।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর লাদাখ থেকে প্রায় ১,৬০০ কিলোমিটার দূরে রাজস্থানের জোধপুরে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এবং “রাষ্ট্রদ্রোহ” ও “সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র”-এর অভিযোগে আটক করা হয়। এর আগে লাদাখের রাজধানী লেহতে শান্তিপূর্ণ অনশন চলাকালে একদল তরুণ প্রতিবাদকারী বিজেপি কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দিলে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে চারজন নিহত হন। সরকারের অভিযোগ—ওয়াংচুকই ওই সহিংসতার প্ররোচনাকারী।

একসময় এই ওয়াংচুকই ছিলেন সরকারের প্রিয় মুখ—বিজেপি সরকার তার উদ্ভাবনী শিক্ষা প্রকল্প ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ নিয়ে প্রচার চালাত। কিন্তু আজ সেই সরকারই তাঁকে “পাকিস্তানঘনিষ্ঠ ষড়যন্ত্রকারী” বলে অভিযুক্ত করছে।

ওয়াংচুকের স্ত্রী গীতাঞ্জলি আংমো বলেন, যে সরকার এক মাস আগেও তাকে সম্মান জানাচ্ছিল, এখন সেই সরকার তাকে দেশদ্রোহী বলছে। তাকে ভয় দেখানোই মূল উদ্দেশ্য।

লাদাখে বর্তমানে পরিস্থিতি উত্তপ্ত। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের নেতাদের গ্রেপ্তার এবং সেনা মোতায়েনের পর লেহ শহর কার্যত কারফিউ-সদৃশ অবস্থায় রয়েছে। এই দমন-পীড়নের মধ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ী স্তানজিন দর্জে আত্মহত্যা করেন, যিনি ওয়াংচুকের ঘনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন।

১৯৬৬ সালে লাদাখের উলেতোকপো গ্রামে জন্ম নেওয়া ওয়াংচুক ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বিকল্প শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সেকমল (SECMOL), যা লাদাখের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিপ্লব আনে। পরে তিনি “আইস স্তূপা” (কৃত্রিম হিমবাহ) ও সৌর তাঁবু তৈরি করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান। ২০১৮ সালে তিনি ম্যাগসেসে পুরস্কার অর্জন করেন। তার জীবনের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে বলিউডের বিখ্যাত সিনেমা থ্রি ইডিয়টস।

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি পরিবেশবিদ থেকে রাজনীতিতে সরাসরি যুক্ত হন। ২০২০ সালের গালওয়ান সংঘর্ষে তিনি চীনা পণ্যের বয়কটের আহ্বান জানান; ২০২৩ সালে জলবায়ু আন্দোলনে অংশ নিয়ে গৃহবন্দি হন। ২০২৪ সালে সাংবিধানিক সুরক্ষার দাবিতে তিনি অনশন শুরু করেন, যা এখন লাদাখজুড়ে এক রাজনৈতিক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়ে উঠেছে।

লাদাখ পুলিশ দাবি করছে, ওয়াংচুকের আন্দোলনের সঙ্গে পাকিস্তানের সংযোগ রয়েছে। তবে স্থানীয় নেতারা বলছেন, এটি আন্দোলন দমন ও ভয় দেখানোর কৌশল।

গীতাঞ্জলি আংমো সতর্ক করে বলেন, সরকার যদি এভাবে মানুষকে দমন করে, তাহলে লাদাখকে দ্বিতীয় কাশ্মীরে পরিণত হতে সময় লাগবে না।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আগামী ১৪ অক্টোবর ওয়াংচুকের গ্রেপ্তারের বৈধতা নিয়ে শুনানি করবে। তার স্ত্রী জানিয়েছেন, ভয় দেখিয়ে আমাদের চুপ করাতে চায় সরকার, কিন্তু আমরা সত্য বলতেই থাকব।

আল জাজিরা অবলম্বনে