
ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ও সামগ্রিক আর্থিক স্থিতিশীলতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রস্তাব অনুযায়ী সমস্যাগ্রস্ত পাঁচটি ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে একটি নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংস্কার কর্মসূচির আওতায় আন্তর্জাতিক দুটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার পর্যালোচনায় দেখা যায়, এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ও শ্রেণিকৃত ঋণের পরিমাণ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ফলে, এই ব্যাংকগুলোকে রেজল্যুশন প্রক্রিয়ার আওতায় এনে নতুন একটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
উচ্চ আদালতে চলমান মালিকানা সংক্রান্ত মামলার কারণে আইসিবি ইসলামী ব্যাংককে প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন তারল্য সহায়তা দেওয়ার পরও উল্লিখিত ব্যাংকগুলোর আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়নি; বরং তারল্য সংকট আরও তীব্র হয়েছে। ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি, শ্রেণিকৃত ঋণের হার ও প্রভিশন ঘাটতি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এতে ব্যাংক খাতে জনআস্থা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ব্যাংক রেজল্যুশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুযায়ী সংকটাপন্ন পাঁচটি ব্যাংককে একীভূত করে সরকারি মালিকানাধীন নতুন শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব করে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, নতুন ব্যাংকের অনুমোদিত মূলধন হবে ৪০,০০০ কোটি টাকা এবং প্রাথমিক পরিশোধিত মূলধন হবে আনুমানিক ৩৫,০০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০,০০০ কোটি টাকা সরকার মূলধন হিসেবে প্রদান করবে—যার অর্ধেক নগদে ও অর্ধেক বন্ডের মাধ্যমে। পাশাপাশি, প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের ১৫,০০০ কোটি টাকা বেইন-ইন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মূলধনে রূপান্তর করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, একীভূত পাঁচটি ব্যাংকের শেয়ারের নেট অ্যাসেট ভ্যালু ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে। ফলে, মালিক ও শেয়ারহোল্ডারদের দাবির কোনো সুযোগ থাকছে না। তবে, ব্যক্তি আমানতকারীদের অর্থ ব্যাংক রেজল্যুশন পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিশোধ করা হবে এবং প্রয়োজনে আমানত সুরক্ষা তহবিলের অর্থ ব্যবহার করা হবে।
এরই মধ্যে ‘রেজল্যুশন পরিকল্পনা (স্কীম) ২০২৫’ বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বিশেষ সভায় অনুমোদন পেয়েছে এবং ব্যাংকিং সেক্টর ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কাউন্সিল সভায়ও তা গৃহীত হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, নতুন ব্যাংকটির সব কার্যক্রম অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় তত্ত্বাবধান বজায় থাকবে।
এছাড়া, মন্দ ঋণ ও সম্পদ পুনরুদ্ধার এবং অনিয়মের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেবে।