
গেলো দুই বছরে কেবল ৬৭ হাজার মানুষই হত্যা করেনি, গাজাকেও ধ্বংসস্তুপে পরিণত করা হয়েছে ।। ছবি আল জাজিরার ডকুমেন্টারি থেকে নেওয়া
হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপের চূড়ান্ত খসড়ায় স্বাক্ষরের খবর নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল। গত দুই বছরে ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার পর গাজার যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
ইসরায়েল সরকারের মুখপাত্র শোশ বেদরোসিয়ান বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) সাংবাদিকদের জানান, মিসরের শার্ম আল শেখ শহরে টানা তিন দিনের টানটান আলোচনার পর বৃহস্পতিবার সকালে চুক্তিতে স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা পরিকল্পনার প্রথম ধাপ হিসেবে চুক্তিটি গৃহীত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গাজায় আটক থাকা অবশিষ্ট ইসরায়েলি বন্দিদের (২০ জন এখনো জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে) ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে হবে, বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদেরও ছেড়ে দেবে ইসরায়েল। একই সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীকে “সম্মত একটি সীমারেখা” পর্যন্ত পিছু হটতে হবে বলে ট্রাম্প জানিয়েছেন।
ইসরায়েলি মুখপাত্র জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিসভা চুক্তি অনুমোদনের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। এই ২৪ ঘণ্টা শেষে শুরু হবে বন্দি বিনিময়ের ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা।
তিনি আরও জানান, বন্দি বিনিময়ের অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনি নেতা মারওয়ান বারঘুতিকে মুক্তি দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। মুখপাত্র দাবি করেন, বাহিনী পিছু হটার পরও ইসরায়েল গাজার অর্ধেকেরও বেশি এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখবে।
ধারণা করা হচ্ছে মারওয়ান বারঘুতিকে মুক্তি না দেওয়ার ইসরায়েলের সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনিদের ক্ষোভ উসকে দিতে পারে।
গুরুতর কিছু মতপার্থক্য রয়ে গেছে
আল জাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, যদিও চুক্তির প্রাথমিক ধাপের প্রাথমিক অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে, তবুও ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে গুরুতর মতপার্থক্য রয়ে গেছে। এসব মতপার্থক্যের মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা ও পরিধি, যুদ্ধ-পরবর্তী গাজা প্রশাসনের কাঠামো এবং হামাসের ভবিষ্যৎ।
চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে, যা এখনো আলোচনার পর্যায়ে, ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, হামাসের নিরস্ত্রীকরণ এবং গাজায় নতুন নিরাপত্তা ও শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
গাজায় উল্লাস, আনন্দ তেলআবিবেও, বিশ্বজুড়ে স্বস্তি
যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় বিশ্বজুড়ে স্বস্তি নেমে এসেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, জাতিসংঘ এখন ‘সহায়তা ত্বরান্বিত করা, পুনর্গঠন ও পুনরুদ্ধার কার্যক্রম এগিয়ে নিতে’ প্রস্তুত।
দুই বছরের ইসরায়েলি হামলা ও অবরোধে বিপর্যস্ত গাজার মানুষের কাছে এটি স্বস্তির নিঃশ্বাস। আল জাজিরার গাজা প্রতিনিধি তারেক আবু আজযুম জানান, দুই বছরের ধ্বংসযজ্ঞ, বাস্তুচ্যুতি ও ভগ্ন প্রতিশ্রুতির পর যুদ্ধবিরতির খবর শুনে পরিবারগুলো উল্লাসে ফেটে পড়েছে। মানুষ প্রিয়জনদের সঙ্গে পুনর্মিলিত হওয়ার এবং হারানোদের শোক পালনের অপেক্ষায়।
তবে অনেক বিশ্লেষক সতর্ক করে বলেছেন, এটি কোনো স্থায়ী শান্তিচুক্তি নয়।
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষক ওমর বদ্দার বলেন, ‘এটি কেবল প্রথম ধাপের চুক্তি—একটি বন্দি বিনিময় এবং গণহত্যা থামানোর উদ্যোগ, যাতে কিছু মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু এটি যুদ্ধের সমাপ্তির নিশ্চয়তা দেয় না। ইসরায়েল কি সত্যিই গাজাকে পুনর্গঠনের সুযোগ দেবে—সেটিই এখন বড় প্রশ্ন।’
আল জাজিরা অবলম্বনে




























