
২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলীয় নেতা ও গণতন্ত্র আন্দোলনের প্রতীক মারিয়া কোরিনা মাচাদো।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টার দিকে নরওয়ের রাজধানী অসলোতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নোবেল কমিটি এ ঘোষণা দেয়।
কী কারণে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের মতো মর্যাদাপূর্ণ বৈশ্বিক পুরস্কারে ভূঁষিত হলেন এই সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ! চলুন জানা যাক।
গণতন্ত্রের লড়াইয়ের স্বীকৃতি
নোবেল কমিটির প্রেসিডেন্ট জর্গেন ওয়াতনে ফ্রাইডনেস বলেছেন, মারিয়া কোরিনা মাচাদো ভেনেজুয়েলার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় ও শান্তিপূর্ণ সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। তিনি ভয়-ভীতি, দমন–নিপীড়ন, গৃহবন্দি পরিস্থিতি—সবকিছুর মুখোমুখি হয়েও দেশ ত্যাগ না করে মানুষের পাশে থেকেছেন।
মাচাদো দীর্ঘদিন ধরে প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। ২০২৩ সালের প্রাথমিক নির্বাচনে তিনি ব্যাপক ব্যবধানে বিজয়ী হলেও, ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে তাঁর প্রার্থিতা নিষিদ্ধ করে সরকার। পরবর্তী সময়ে তাঁকে গোপন স্থানে অবস্থান করতে হলেও তিনি দেশ ছাড়েননি।
মাচাদোর পটভূমি
১৯৬৭ সালের ৭ অক্টোবর কারাকাসে জন্ম নেওয়া মারিয়া কোরিনা মাচাদো একজন প্রকৌশলী ও সমাজকর্মী। তিনি ২০০২ সালে সুমাতে (Súmate) নামের একটি নাগরিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন, যা স্বচ্ছ ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রচারে কাজ করে। ভেনেজুয়েলার সংসদ সদস্য হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
মানবাধিকার, গণতন্ত্র, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণে তাঁর ভূমিকা দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে।
পুরস্কারের গুরুত্ব
নোবেল কমিটির ঘোষণায় বলা হয়, “ভেনেজুয়েলার মতো এক গভীর রাজনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ পরিবর্তনের যে আশা মাচাদো জাগিয়েছেন, তা আন্তর্জাতিকভাবে অনুপ্রেরণাদায়ক।”
এই বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মোট ৩৩৮টি মনোনয়ন জমা পড়েছিল, যার মধ্যে ২৪৪ জন ব্যক্তি এবং ৯৪টি প্রতিষ্ঠান ছিল। তাদের মধ্য থেকে বাছাই করে এই স্বীকৃতি দেওয়া হলো মাচাদোকে।
প্রতিটি নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার (প্রায় ১.১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। পুরস্কারের সঙ্গে থাকবে একটি সোনার পদক ও একটি ডিপ্লোমা। আনুষ্ঠানিকভাবে এটি প্রদান করা হবে ১০ ডিসেম্বর, নোবেল প্রতিষ্ঠাতা আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীর দিনে, নরওয়ের রাজধানী অসলোতে।
প্রতিযোগিতা ও প্রতিক্রিয়া
এই বছরের সম্ভাব্যদের মধ্যে ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, সুদানের ইমারজেন্সি রেসপন্স রুমস সংগঠন এবং কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টস (CPJ)। তবে নোবেল কমিটি জানায়, সিদ্ধান্তটি সম্পূর্ণভাবে আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছা ও পুরস্কারের মূল দর্শনের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে।
মারিয়া কোরিনা মাচাদো পুরস্কার পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “এটি শুধু আমার নয়, ভেনেজুয়েলার প্রতিটি নাগরিকের পুরস্কার—যারা স্বাধীনতা ও মর্যাদার জন্য লড়াই করছেন।”
অতীতের প্রেক্ষাপট
নোবেল শান্তি পুরস্কার ইতিহাসে ৩১টি প্রতিষ্ঠান ও অসংখ্য ব্যক্তি এই স্বীকৃতি পেয়েছেন। ২০০৬ সালে একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ পুরস্কার পান। সর্বকনিষ্ঠ বিজয়ী ছিলেন পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই (২০১৪), আর প্রবীণতম ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী জোসেফ রটব্লাট (১৯৯৫)।
গত বছর (২০২৪) এই পুরস্কার পায় জাপানের সংগঠন নিহন হিদানকিও, যারা হিরোশিমা ও নাগাসাকির পারমাণবিক বোমা হামলায় বেঁচে থাকা মানুষদের প্রতিনিধিত্ব করে এবং পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত পৃথিবীর জন্য কাজ করে আসছে।




























