
মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায় সংক্রান্ত চুক্তিতে অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সরকারের বিপুল আর্থিক ক্ষতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক কয়েক মন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদকের জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম। তিনি বলেন, “কমিশন আজ অভিযোগের প্রাথমিক যাচাই শেষে মামলার অনুমোদন দিয়েছে।”
দুদক সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম লিমিটেড (সিএনএস)-কে একক উৎসভিত্তিক (সিঙ্গেল সোর্স) দরপত্রের মাধ্যমে মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পূর্বের বৈধ টেন্ডার বাতিল করে কোনো প্রতিযোগিতা বা আলোচনাবিহীনভাবে এই চুক্তি সম্পাদন করা হয়।
চুক্তিতে সিএনএস লিমিটেডকে টোল আদায়ের বিপরীতে মোট আদায়ের ১৭.৭৫ শতাংশ সার্ভিস চার্জ (ভ্যাট ও আইটি ব্যতীত) দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর ফলে প্রতিষ্ঠানটি ৪৮৯ কোটি টাকার বেশি বিল উত্তোলন করে। অথচ ২০১০ থেকে ২০১৫ মেয়াদে একই কাজের জন্য এমবিইএল-এটিটি যৌথ প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছিল মাত্র ১৫ কোটি টাকার কিছু বেশি।
দুদকের অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, ২০২২–২০২৫ মেয়াদে ইউডিসি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে তিন বছরের জন্য মাত্র ৬৭ কোটি টাকায় চুক্তি পায়, যা পাঁচ বছরের হিসেবে প্রায় ১১২ কোটি টাকা হয়। ফলে সিএনএসের সঙ্গে একক উৎসভিত্তিক চুক্তির কারণে সরকারের ৩০৯ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগে অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ওবায়দুল কাদের, আনিসুল হক এবং প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব ও কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন এম এ এন ছিদ্দিক, মো. ফারুক জলিল, মোহাম্মদ শফিকুল করিম, প্রকৌশলী মো. ফিরোজ ইকবাল, ইবনে আলম হাসান, মো. আফতাব হোসেন খান ও মো. আব্দুস সালাম।
বেসরকারি পক্ষ থেকে অভিযুক্ত হয়েছেন সিএনএস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনীর উজ জামান চৌধুরী, পরিচালক সেলিনা চৌধুরী ও ইকরাম ইকবাল।
দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা পারস্পরিক যোগসাজশে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের বা অন্যের আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করেছেন। এতে রাষ্ট্রের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এ ঘটনায় দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।