
৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। আজ বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসজুড়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভোটগ্রহণ। দীর্ঘ বিরতির পর এই ঐতিহাসিক নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭ হাজার ৫২১ জন শিক্ষার্থী, সাবেক ছাত্রনেতা ও গোটা দেশের ছাত্ররাজনীতির পর্যবেক্ষকরা।
কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৯০৮ জন প্রার্থী। নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হলেও শাটল ট্রেন, ঝুপড়ি, ক্যান্টিন, হল ও কটেজগুলোয় এখনও উত্তাপ ছড়াচ্ছে নির্বাচনী আলোচনা। এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ১৩টি প্যানেল।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভিপি, জিএস ও এজিএস- এই তিনটি শীর্ষ পদে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।
১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পর্যন্ত মাত্র ছয়বার চাকসু নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। আজ সপ্তমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই নির্বাচন, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি করেছে বিরল আগ্রহ ও উদ্দীপনা।
ভোটগ্রহণ হচ্ছে নতুন কলা ভবন, বিজ্ঞান অনুষদ, সমাজবিজ্ঞান ও বাণিজ্য অনুষদ ভবন এবং আইটি ভবনে। ৬০টি কক্ষে ৭০০টির বেশি বুথে ভোট দেবেন শিক্ষার্থীরা। দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের জন্য চাকসু ভবনে বিশেষ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
ভোট গণনায় ব্যবহার করা হবে সিসি ক্যামেরা, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও ওএমআর প্রযুক্তি। ব্যালটে থাকবে ২৪ ডিজিটের কোড ও গোপন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
একজন ভোটারকে চাকসুর জন্য ২৬টি ও হল/হোস্টেলের জন্য ১৪টি- মোট ৪০টি ভোট দিতে হবে, সময় পাবেন ১০ মিনিট।
কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি পদে প্রার্থী ৪১৫ জন, হল সংসদে ৪৭৩ জন এবং হোস্টেলে ২০ জন। ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৪ জন, জিএস পদে ২২ জন ও এজিএস পদে ২১ জন।
ভিপি পদে আলোচনায় রয়েছেন সাজ্জাদ হোসেন হূদয়, ইব্রাহীম হোসেন রনি, মাহফুজুর রহমান, ধ্রুব বড়ুয়া ও মুহাম্মদ ফরহাদুল ইসলাম। জিএস পদে আলোচনায় রশিদুল হক দিনার, সাঈদ বিন হাবিব, শাফায়াত হোসেন, সাকিব মাহমুদ ও একমাত্র নারী প্রার্থী চৌধুরী তাসনীম জাহান শ্রাবণ। এজিএস পদে রয়েছেন আইয়ুবুর রহমান তৌফিক, সাজ্জাত হোসেন মুন্না ও জান্নাতুল ফেরদৌস।
এবারের নির্বাচনে ৪৭ জন নারী প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন, যদিও শীর্ষ তিন পদে মাত্র একজন নারী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
শিক্ষার্থীদের আশা- নির্বাচিত প্রতিনিধিরা রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর স্বার্থ ছাড়িয়ে ক্যাম্পাসের বাস্তব সমস্যাগুলো সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। আবাসনের সংকট, শাটল ট্রেনের ভিড়, হলের খাবারের মান, নিরাপত্তা ও চিকিৎসা সেবা- সবই প্রাধান্য পাচ্ছে নির্বাচনী ইশতেহারে।
নির্বাচন ঘিরে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দায়িত্বে রয়েছেন র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও এপিবিএন সদস্যরা। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও রাখা হবে। বহিরাগতদের প্রবেশে কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মনির উদ্দিন জানিয়েছেন, ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হয়েছে। ভোট কারচুপির সুযোগ থাকবে না।’
শিক্ষার্থীদের ভোটকেন্দ্রে আনতে ৩০টি বাস ও নগর থেকে ১১টি শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে, এজিএস পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হোসেন শেষ মুহূর্তে প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে আইয়ুবুর রহমান তৌফিককে সমর্থন জানান।
দীর্ঘ বিরতির পর অনুষ্ঠিত এই চাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের বিপুল অংশগ্রহণই ইঙ্গিত দিচ্ছে- তারা নতুন নেতৃত্ব ও ইতিবাচক পরিবর্তন দেখতে চায়। তাদের প্রত্যাশা, নির্বাচিত নেতৃত্ব ক্যাম্পাসকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে নিরাপদ, মুক্ত ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলবে।