
সুদীর্ঘ ৩৫ বছর পর আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ঐতিহাসিক এ নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। ভোটে জালিয়াতি ও কারচুপি রোধে এবারই প্রথমবারের মতো চালু করা হয়েছে থ্রিডি সিকিউরিটি সিস্টেম।
বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন জানায়, এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৮ হাজার ৯০১ জন। প্রার্থী রয়েছেন ৮৬০ জন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৯টি একাডেমিক ভবনে স্থাপিত ১৭টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলবে।
নির্বাচন কমিশন জানায়, ভোটের প্রতিটি ধাপে তিন স্তরের যাচাই নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রথম ধাপে ভোটারের আইডি কার্ডের সত্যতা যাচাই, দ্বিতীয় ধাপে ইউনিক আইডি নম্বর মিলিয়ে দেখা এবং তৃতীয় ধাপে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা থেকে চূড়ান্ত যাচাই শেষে ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।
নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, “আমরা এবার শুধু অমোচনীয় কালির ওপর নির্ভর করছি না, বরং থ্রিডি সিকিউরিটি ব্যবস্থার মাধ্যমে ফুলপ্রুফ ভোটিং নিশ্চিত করছি।” কোনো ধাপে সন্দেহ তৈরি হলে বিশেষ কিউআর কোডের মাধ্যমে ভোটারের তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে।
ভোটগণনায় ব্যবহৃত হবে ওএমআর মেশিন ও বিশেষ সফটওয়্যার। ছয়টি মেশিন ও সমপরিমাণ স্ক্যানারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১৭ ঘণ্টার মধ্যে ফলাফল প্রকাশ সম্ভব হবে বলে আশা করছে কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক ও স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিতে চাই।”
নির্বাচন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তাব্যবস্থা। মোতায়েন করা হয়েছে দুই হাজার ৩০০ পুলিশ সদস্য, ১২ প্লাটুন র্যাব ও ছয় প্লাটুন বিজিবি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনসিসি, রোভার ও স্টুডেন্ট কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের স্বেচ্ছাসেবকরাও দায়িত্বে রয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বসানো হয়েছে ১০০টি সিসিটিভি।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবু সুফিয়ান বুধবার ক্যাম্পাস পরিদর্শন শেষে বলেন, “যে সব জায়গায় নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে, সেগুলো আমরা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিয়েছি। সাইবার স্পেসেও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।”
নির্বাচনের দিন বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে। সাতটি গেটে থাকবে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা।
নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্বে রয়েছেন ২১২ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক। ফলাফল প্রস্তুতিতে কাজ করবে ৪৩ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি। নির্বাচন কমিশনার মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, “আমরা অতীতের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে সতর্ক আছি। ১৭ ঘণ্টার ভেতরেই ফলাফল ঘোষণার চেষ্টা করব।”
এ ছাড়া নির্বাচনের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে গঠন করা হয়েছে ১০ সদস্যের একটি কমিটি। এর সভাপতি অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এম রফিকুল ইসলাম।
১৯৬২ সাল থেকে শুরু হওয়া রাকসু নির্বাচনের ইতিহাসে এটি ১৫তম আয়োজন। সর্বশেষ রাকসুর ১৪তম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৮৯ সালে। দীর্ঘ বিরতির পর এ ভোটকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে আগ্রহ ও প্রত্যাশা। ক্যাম্পাসে নির্বাচনী পোস্টার, প্রচারণা আর স্লোগানে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।