রবিবার । ডিসেম্বর ৭, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৭:৪৯ অপরাহ্ন
শেয়ার

লুভরে চাঞ্চল্যকর চুরি, খোয়া গেলো যা যা


LOUVore

সূর্য উঠেছে প্যারিসের আকাশে। পর্যটকরা তখন ধীরে ধীরে প্রবেশ করছেন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় জাদুঘর লুভর মিউজিয়াম-এ। আর ঠিক সেই সময়ই একদল দুর্ধর্ষ চোর ইতিহাসের অন্যতম সাহসী চুরির অভিযান চালায়। মাত্র আট মিনিটে তারা লুটে নেয় ফ্রান্সের অমূল্য রত্নভাণ্ডার—রাজারানি ও সম্রাটদের ব্যবহৃত রাজকীয় অলংকার।

কীভাবে ঢুকেছিল তারা
রবিবার সকালে লুভরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত বিখ্যাত গ্যালারি অব অ্যাপোলো-তে ঘটে এই নাটকীয় চুরি। ঠিক সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে, চার সদস্যের দলটির দুজন একটি মেকানিক্যাল মইসহ ট্রাক নিয়ে ভবনের পাশে এসে থামে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তারা মই বেয়ে উঠে পড়ে বারান্দায় এবং জানালার কাচ কেটে ঢুকে পড়ে ভেতরে।

জানালাগুলো শক্তিশালী বা বুলেটপ্রুফ ছিল না, ফলে মোটরচালিত অ্যাঙ্গেল গ্রাইন্ডার দিয়েই সহজে ভেঙে ফেলতে সক্ষম হয় তারা। ৯টা ৩৪ মিনিটে চোরেরা গ্যালারির ভেতরে প্রবেশ করে। তাদের দেখে নিরস্ত্র প্রহরীরা পালিয়ে যায়।

এরপর মাত্র তিন মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে তারা দুটি প্রদর্শনী কাচ ভেঙে রাজকীয় গয়না চুরি করে পালিয়ে যায়। পুরো অভিযান ছিল দ্রুত ও পরিকল্পিত—তারা জানত ঠিক কী কী নিতে এসেছে।

কী কী চুরি হয়েছে
ফরাসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মোট আটটি মূল্যবান বস্তু চুরি হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—

রানি হরটেন্স ও রানি মেরি-আমেলির ব্যবহৃত টিয়ারা, নেকলেস ও কানের দুলৎ
নেপোলিয়ন বোনাপার্টের উপহার দেওয়া এমারেল্ড নেকলেস ও কানের দুল
সম্রাজ্ঞী ইউজেনির মুক্তা ও হীরার টিয়ারা এবং ডায়মন্ড ব্রোচ
‘রেলিক্যুয়ারি ব্রোচ’ নামে পরিচিত একটি বিশেষ ব্রোচ

তবে অভিযানের সময় একটি বড় ভুল করে বসে তারা—ইউজেনি ক্রাউন নামের সোনার মুকুটটি পালানোর পথে পড়ে যায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পরে উদ্ধার হয়।

Crown

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে একটি হাই-ভিজ ভেস্ট ও কিছু যন্ত্রপাতি ফেলে গেছে চোরেরা, যা ফরেনসিকভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

পলায়ন ও অনুসন্ধান
চুরির খবর ছড়িয়ে পড়ে ৯টা ৩৫ মিনিটে। জাদুঘরের কন্ট্রোল রুমে অ্যালার্ম বেজে উঠলেও তা ঠিকমতো শোনা গিয়েছিল কি না, তা এখনো তদন্তাধীন।

৯টা ৩৮ মিনিটে, দলটি মেকানিক্যাল মইয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়, যাতে প্রমাণ নষ্ট হয়। তারপর তারা ইয়ামাহা TMAX স্কুটারে চড়ে পালিয়ে যায়—যার গতি ঘণ্টায় ১০০ মাইলের বেশি।

ফরাসি তদন্তকারীরা বলছেন, চুরি হওয়া রত্নগুলোর আর্থিক মূল্য যেমন বিপুল, তেমনি দেশের ঐতিহ্যগত গুরুত্বও অপরিমেয়—তাদের উদ্ধারের আশায় সর্বাত্মক অভিযান চলছে।