
ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউজে ফেরার পর প্রথমবারের মতো তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেন। একই দিনে মস্কোর বিরুদ্ধে পদক্ষে নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা।
বুধবার (২২ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের অর্থহীন যুদ্ধ শেষ করতে অস্বীকৃতি এবং শান্তি আলোচনায় আন্তরিকতার অভাবের কারণেই এই পদক্ষেপ।’
নতুন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মূল লক্ষ্য রাশিয়ার দুই প্রধান তেল কোম্পানি—লুকওয়েল (Lukoil) ও রসনেফট (Rosneft)। বেসেন্ট বলেন, ‘আজকের পদক্ষেপ রাশিয়ার জ্বালানি খাতের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং ক্রেমলিনের যুদ্ধযন্ত্রে অর্থ প্রবাহ ব্যাহত করবে।’
মার্কিন ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় রসনেফট ও লুকওয়েলের ডজনাধিক সহযোগী প্রতিষ্ঠানকেও কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ফলে তাদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ জব্দ হবে এবং কোনো মার্কিন নাগরিক বা প্রতিষ্ঠান তাদের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবে না।
তবে রুশ তেল ক্রেতা চীন ও ভারতের ওপর এখনই কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। ট্রাম্প জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এপেক সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে তিনি রুশ তেল কেনার বিষয়ে আলোচনা করবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ইউক্রেনে যুদ্ধ অব্যাহত থাকলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতিও তাদের রয়েছে।
রসনেফট, রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানি (গ্যাজপ্রমের পর), সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিষেধাজ্ঞা ও তেলের দরপতনের কারণে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে তাদের নিট আয় আগের বছরের তুলনায় ৬৮ শতাংশ কমেছে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, লুকওয়েল—রাশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান এবং সর্ববৃহৎ বেসরকারি কোম্পানি—২০২৪ সালে ২৬.৫ শতাংশ লাভ কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছে। কোম্পানিটি এর জন্য ইউক্রেন যুদ্ধের ব্যয় মেটাতে সরকারের আরোপিত অতিরিক্ত করকে দায়ী করেছে।
এদিকে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় স্থবিরতা এবং পুতিনের ‘অসহযোগিতামূলক মনোভাব’-এ ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রাম্প হাঙ্গেরিতে পুতিনের সঙ্গে তার নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেছেন। হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করার সময়টা সঠিক মনে হয়নি। মনে হয়েছে আমরা কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি পাব না, তাই আপাতত বাতিল করেছি—পরে আবার করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবারই আমি ভ্লাদিমিরের সঙ্গে ভালো আলোচনা করি, কিন্তু পরবর্তীতে কিছুই ঘটে না। আলোচনা এগোয় না।’
যুক্তরাষ্ট্র যখন রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তখন বসে নেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ওয়াশিংটনের ঘোষণার একই দিনে ইউরোপীয় ইউনিয়নও রাশিয়ার বিরুদ্ধে তাদের ১৯তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ অনুমোদন করেছে। এতে রুশ তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির ওপর ইউরোপজুড়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এছাড়া রুশ কূটনীতিকদের ওপর নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, ১১৭টি নতুন ‘ছায়া নৌযান’কে কালো তালিকায় যুক্ত করা, এবং কাজাখস্তান ও বেলারুশের কয়েকটি ব্যাংকের ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ইইউ।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রধান সহকারী আন্দ্রি ইয়ারমাক ইইউ’র সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘আমরা থামছি না—২০তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ প্রস্তুত হচ্ছে।’




























