রবিবার । ডিসেম্বর ৭, ২০২৫
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ৮:৫১ পূর্বাহ্ন
শেয়ার

ইজরাইলের বাঁধায় ত্রাণ পৌঁছানো যাচ্ছেনা, একচল্লিশটি ত্রাণ সংস্থার অভিযোগ

গাজায় যুদ্ধবিরতির পরও ভয়াবহ খাদ্যসংকট: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তা


গাজায় খাদ্যসংকট

গাজায় খাদ্যসংকট

মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেও গাজায় যুদ্ধবিরতির দুই সপ্তাহ পর খাদ্যসংকট এখনো ‘বিপর্যয়কর’ অবস্থায় রয়েছে বলে ২৩ অক্টোবর এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেয়াসুস।

তিনি আরো বলেন, “যতোটুকু ত্রাণ প্রবেশ করছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। পর্যাপ্ত খাদ্য না পৌঁছানোয় ক্ষুধা কমেনি।”

গাজায় অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকা জনগণের পুষ্টিগত চাহিদা পূরণ হচ্ছে না—বৃহস্পতিবার এমন অভিযোগ করেছে ৪১টি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা, যাদের মধ্যে রয়েছে অক্সফাম ও নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল। এসব সংস্থা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে “ইচ্ছেমতো ত্রাণ আটকে দেওয়ার” অভিযোগ তুলেছে। তাদের প্রকাশিত খোলা চিঠিতে বলা হয়, ১০ থেকে ২১ অক্টোবরের মধ্যে আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর ৯৯টি ত্রাণ পাঠানোর আবেদন ও জাতিসংঘের ছয়টি আবেদনের অনুমতি ইসরায়েল বাতিল করেছে।

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় ২,০০০ টন ত্রাণ প্রবেশের কথা থাকলেও বর্তমানে গাজায় যাচ্ছে মাত্র ৭৫০ টন খাদ্যসামগ্রী। কেবল দুটি সীমান্ত—কেরেম আবু সালেম (দক্ষিণে) ও আল-করারা (কেন্দ্রে)—খোলা থাকায় এই ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

প্যালেস্টাইনি এনজিও পার্ক (PARC)-এর বহিঃসম্পর্ক পরিচালক বাহা জাকউত বলেন, “পরিস্থিতি এখনো ভয়াবহ। বাণিজ্যিক ট্রাকে বিস্কুট, চকোলেট, কোমল পানীয় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে, অথচ বীজ বা জলপাইয়ের মতো প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়ে গেছে।” তিনি জানান, “এগুলো শিশু, নারী ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর ন্যূনতম পুষ্টিমানের চাহিদাও মেটায় না।” এক কেজি টমেটোর দাম বেড়ে ১৫ শেকেলে পৌঁছেছে, যা আগে ছিল মাত্র এক শেকেল।

খান ইউনিসে অপেক্ষারত শিশু

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে গাজার অন্তত এক-চতুর্থাংশ মানুষ অনাহারে, যাদের মধ্যে রয়েছে প্রায় ১১,৫০০ গর্ভবতী নারী। নবজাতকদের ৭০ শতাংশ সময়ের আগেই জন্ম নিচ্ছে বা ওজন কম নিয়ে জন্মাচ্ছে—যা যুদ্ধের আগের সময়ের তুলনায় তিনগুণ বেশি। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (UNFPA) সহ-নির্বাহী পরিচালক অ্যান্ড্রু স্যাবারটন সতর্ক করে বলেছেন, “অপুষ্টি শুধু মায়ের নয়, নবজাতকের সারাজীবনের ওপর প্রজন্মগত প্রভাব ফেলবে।”

আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (ICJ) বুধবার এক রায়ে বলেছে, গাজার জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের দায়িত্ব ইসরায়েলের ওপর বর্তায়। এর আগে এপ্রিল মাসে জাতিসংঘ ও ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিরা আদালতে অভিযোগ করেছিলেন যে মার্চ থেকে মে পর্যন্ত ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিয়েছে।

মানবিক সংস্থাগুলোর কথা অনুযায়ী, “ত্রাণসামগ্রী প্রস্তুত, কর্মীরা প্রস্তুত—এখন প্রয়োজন কেবল প্রবেশাধিকার।” তারা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন ও যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।

প্যালেস্টাইনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের যুদ্ধ ও হামলায় অন্তত ৬৮ হাজার ২৮০ জন নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৭৫ জন আহত হয়েছেন। অপরদিকে, হামাসের নেতৃত্বে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে চালানো হামলায় ১,১৩৯ জন নিহত ও দুই শতাধিক মানুষ আটক হয়।

আরো পড়ুন