
শিশুদের বুকার
বিশ্বখ্যাত বুকার প্রাইজ ফাউন্ডেশন ঘোষণা দিয়েছে, প্রথমবারের মতো শিশুদের জন্য আলাদা একটি সাহিত্য পুরস্কার চালু করতে যাচ্ছে তারা। ‘চিলড্রেনস বুকার প্রাইজ’- নামে এই নতুন পুরস্কারে আট থেকে ১২ বছর বয়সী পাঠকদের জন্য লেখা সেরা কল্পগল্পের লেখককে দেওয়া হবে ৫০ হাজার পাউন্ড। এর অর্থই হচ্ছে, চালু হতে যাচ্ছে, ‘শিশুদের বুকার’।
২০২৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুরস্কার চালু হবে এবং ২০২৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা করা হবে প্রথম বিজয়ীর নাম। এটি হবে বুকার ইতিহাসে প্রথম পুরস্কার যেখানে শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয় বিচারক একসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেবেন। উদ্বোধনী পর্বের বিচারক প্যানেলের চেয়ারম্যান হিসেবে থাকছেন শিশুতোষ লেখক ও বর্তমান চিলড্রেনস লরিয়েট ফ্র্যাঙ্ক কট্রেল-বয়েস। তিনি আরও দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক বিচারকের সঙ্গে মিলে শর্টলিস্ট নির্ধারণ করবেন, এরপর তিনজন শিশু বিচারক যোগ দেবেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে।
আর এভাবেই নির্ধারিত হবে ‘শিশুদের বুকার পুরস্কার’।
শুধু পুরস্কারেই থেমে থাকছে না আয়োজনটি। প্রতিবছর শর্টলিস্টভুক্ত ও বিজয়ী বইয়ের ৩০ হাজার কপি শিশুদের উপহার হিসেবে দেওয়া হবে, জাতীয় সাক্ষরতা ট্রাস্ট, রিডিং এজেন্সি ও চিলড্রেনস বুক প্রজেক্টের মতো সংস্থাগুলোর সহায়তায়। লক্ষ্য একটাই—শিশুদের বই পড়ার আনন্দে ফিরিয়ে আনা।
বুকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী গ্যাবি উড এই উদ্যোগকে বলেছেন, “গত ২০ বছরে আমাদের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী পদক্ষেপ।” তাঁর ভাষায়, “এটি কেবল পুরস্কার নয়—এটি এক সামাজিক উদ্যোগ, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে বই পড়ার প্রতি ভালোবাসা তৈরি করবে। আমরা চাই, শিশুরা নিজেরাই হোক শিশু সাহিত্য মান নির্ধারণের চূড়ান্ত বিচারক।”
ফ্র্যাঙ্ক কট্রেল-বয়েস বলেছেন, “প্রত্যেক শিশুরই উচিত এক দারুণ বইয়ের জগতে ডুব দেওয়ার আনন্দ পাওয়া। এই পুরস্কার ও বই উপহার প্রকল্পের মাধ্যমে হাজারো শিশুর কাছে সেই আনন্দ পৌঁছে যাবে।”

এই নতুন পুরস্কারকে স্বাগত জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রায় সব প্রধান শিশু সাহিত্যিক। সাবেক চিলড্রেনস লরিয়েট মালোরি ব্ল্যাকম্যান, জ্যাকুলিন উইলসন, মাইকেল মরপারগো, ক্রেসিডা কাওয়েল ও অ্যান ফাইন সবাই একে শিশু সাহিত্য ও নতুন লেখকদের জন্য ‘সময়োপযোগী ও অনুপ্রেরণাদায়ক পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
বুকার ফাউন্ডেশনের অংশীদার হিসেবে কাজ করবে এ কে ও ফাউন্ডেশন, যারা শিক্ষা, শিল্প ও সামাজিক সমতা নিয়ে কাজ করে। সংস্থার প্রধান নির্বাহী ফিলিপ লফোর্ড বলেন, “পড়ার আনন্দ ও সামাজিক গতিশীলতার মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। আমরা এমন একটি প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হতে গর্বিত, যা নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।”
এই উদ্যোগকে ঘিরে আলোচনা জমে উঠেছে শিশুদের পড়ার অভ্যাস নিয়ে। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, যুক্তরাজ্যে শিশুদের আনন্দের জন্য বই পড়ার প্রবণতা এখন গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্নে। তাই ‘চিলড্রেনস বুকার প্রাইজ’ কেবল একটি সাহিত্য পুরস্কার নয়, এটি শিশুদের বার্তা দেবে—তাদেরও মূল্য আছে, তাদের কণ্ঠও গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত মূল বুকার প্রাইজ যেমন প্রাপ্তবয়স্ক সাহিত্যের নতুন কণ্ঠকে সামনে এনেছে, তেমনি এই নতুন পুরস্কারও শিশু সাহিত্যের জগতে নতুন প্রতিভাদের জন্য হয়ে উঠবে এক উজ্জ্বল মঞ্চ বলেই বিশ্বাস সংশ্লিষ্টদের।





























