
তালেবানরা ক্ষমতায় ফেরার পর প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ
ইস্তাম্বুলে টানা তিন দিনের আলোচনার পরও কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান শান্তি প্রক্রিয়া অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুই দেশের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সফল না হওয়ায় একে অপরকে দোষারোপ করেছে। চলতি মাসের শুরুতে সীমান্ত এলাকায় ভয়াবহ সংঘর্ষে বহু হতাহতের পর উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে এ আলোচনা শুরু হয়।
২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবানরা ক্ষমতায় ফেরার পর প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে এটি ছিল সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, যেখানে দুই পক্ষেই ডজনখানেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির ধারাবাহিকতায় ইস্তাম্বুলে শুরু হয় এ শান্তি আলোচনা। তবে তিন দিনের আলোচনায় কোনো বড় ধরনের অগ্রগতি হয়নি বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্তও স্পষ্ট নয়, বৈঠক শেষ হয়েছে কি না, নাকি আরও একদিন বাড়ানো হবে। স্থানীয় সূত্র বলছে, এখনো দুই দেশের প্রতিনিধি দল ইস্তাম্বুলেই অবস্থান করছে।
পাকিস্তানের নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানায়, তুরস্ক এখনো অচলাবস্থা ভাঙতে মধ্যস্থতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানি টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, সংকট সমাধানে “শেষ মুহূর্তের প্রচেষ্টা” চলছে। তবে রয়টার্স বলছে, উভয় পক্ষের সূত্র নিশ্চিত করেছে—বৈঠক কোনো সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়েছে।
আলোচনার মূল অন্তরায়: তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)
আলোচনায় প্রধান অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে টিটিপিকে নিয়ন্ত্রণে কাবুলের অনীহার কারণে। টিটিপি আফগান তালেবান থেকে আলাদা একটি গোষ্ঠী, যারা পাকিস্তানের প্রতি বৈরী মনোভাব পোষণ করে।
ইসলামাবাদ অভিযোগ করেছে, টিটিপির শীর্ষ নেতৃত্ব আফগানিস্তান থেকে নির্বিঘ্নে কার্যক্রম চালাচ্ছে। আফগান প্রতিনিধি দল প্রথমে টিটিপির বিরুদ্ধে “দৃশ্যমান ও কার্যকর ব্যবস্থা” নিতে রাজি হলেও পরে কাবুলের নির্দেশে বারবার অবস্থান পরিবর্তন করেছে।
অন্যদিকে এক আফগান সূত্র রয়টার্সকে জানায়, তীব্র বাকবিতণ্ডার মধ্য দিয়ে আলোচনা শেষ হয়। কাবুলের দাবি, টিটিপির ওপর তাদের সরাসরি কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তালেবান-নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম আরটিএ পাকিস্তানকেই দায়ী করেছে অচলাবস্থার জন্য। তাদের দাবি, কাবুল “গঠনমূলক সংলাপের সর্বোচ্চ চেষ্টা” করলেও “পাকিস্তান তেমন সদিচ্ছা দেখায়নি।”
সীমান্তে উত্তেজনা অব্যাহত
শান্তি আলোচনা অনিশ্চয়তায় পড়েছে, দুই পক্ষই বলছে যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর আছে। তবু সীমান্তজুড়ে ছোটখাটো সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহান্তে সংঘর্ষে পাঁচজন পাকিস্তানি সেনা ও ২৫ জন সশস্ত্র যোদ্ধা নিহত হয়েছে।
এ মাসের শুরুর দিকের এই সীমান্ত সংঘর্ষ ২০২১ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করা হয়। এতে পুরো অঞ্চলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে এমন সময় যখন আল-কায়েদার মতো উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলো পুনরায় সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার এক বক্তব্যে বলেন, তিনি “খুব দ্রুতই” আফগানিস্তান–পাকিস্তান সংকটের সমাধান করবেন।