
বিক্ষোভে উত্তাল ইসরায়েল
বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে নেমেছে হাজার হাজার অতিআর্থডক্স ইহুদি। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) জেরুজালেমে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভে অংশ নেয় প্রায় দুই লাখ অতিআর্থডক্স পুরুষ, যারা শহরের প্রধান প্রবেশপথ অবরোধ করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি চালান।
টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, “মিলিয়ন ম্যান প্রোটেস্ট” নামে পরিচিত এই আন্দোলনের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে মেনাহেম মেনডেল লিটজম্যান নামে এক যুবক বহুতল ভবন থেকে পড়ে মারা যান। পুলিশ ঘটনাটিকে সম্ভাব্য আত্মহত্যা হিসেবে তদন্ত করছে।
আয়োজকদের দাবি, এটি ছিল এক “প্রার্থনা সমাবেশ”, তবে বিশ্লেষকদের মতে এটি ছিল অতিআর্থডক্স সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরল এক ঐক্যের প্রকাশ। সাধারণত নিজেদের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ এসব গোষ্ঠী এবার একত্রিত হয়ে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম বৃহৎ বিক্ষোভ আয়োজন করে।
বিক্ষোভের কিছু ঘণ্টা আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) নবগঠিত হারেদি ব্রিগেডের রিজার্ভ সদস্যদের প্রশিক্ষণ সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়, যা প্রতিবাদের মূল বিষয়বস্তুর সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি তৈরি করে।
প্রায় দুই হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকলেও বিক্ষোভের একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ লাঠিচার্জ ও জলকামান ব্যবহার করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে। নিহতের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আয়োজকরা সমাবেশ স্থগিতের ঘোষণা দেন এবং সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে সরে যেতে অনুরোধ জানান।
বিক্ষোভের মূল ইস্যু হলো অতিআর্থডক্স পুরুষদের জন্য বাধ্যতামূলক সেনা নিয়োগের সরকারি পরিকল্পনা ও সাম্প্রতিক খসড়া আইন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সেনা নিয়োগ এড়ানো হারেদি যুবকদের মধ্যে ৮৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা তালিকাভুক্ত প্রায় সাত হাজার ব্যক্তির মাত্র ৭ শতাংশ।
বিতর্কের সূত্রপাত ২০২৩ সালের জুনে, যখন নিরাপত্তা পরিষেবা আইনের একটি ধারা অনুযায়ী যেশিভা শিক্ষার্থীদের জন্য থাকা সামরিক সেবার ছাড়ের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর ইসরায়েলের উচ্চ আদালত রায় দেয়, সরকারকে হারেদি যুবকদেরও সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দিতে হবে।
তবে এখন পর্যন্ত অল্পসংখ্যক শিক্ষার্থী সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। সরকারের আশঙ্কা, নতুন নিয়োগ আইন কার্যকর হলে হারেদি রাজনৈতিক দলগুলো—শাস ও ইউনাইটেড টোরাহ জুডেইজম—বিরোধিতা করে জোট সরকার ভেঙে দিতে পারে। এ কারণেই ইস্যুটি নিয়ে ইসরায়েলের রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা চলছে।