
ছবি: সংগৃহীত
মালয়েশিয়ায় আবারও আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা। দেশটির গ্লাভস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেডিসেরাম অন্যায়ভাবে ১৯০ জন বাংলাদেশি শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
শোষণমূলক আচরণের প্রতিবাদে অংশ নেওয়ায় তাদের চাকরি হারাতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। গত ৩১ অক্টোবর কুয়ালালামপুরভিত্তিক কোম্পানিটি একযোগে বাংলাদেশি কর্মীদের হাতে চাকরিচ্যুতির চিঠি তুলে দেয়।
শ্রমিকদের অভিযোগ, শুধু চাকরি হারানোই নয়, প্রতিষ্ঠানটি তাদের ভিসা বাতিলের উদ্যোগও নিয়েছে, যাতে দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানো যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শ্রমিক জানান, “আমরা শুনেছি, অন্তত দশজনের ভিসা ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে, বাকিদের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
আরেক শ্রমিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা আইনজীবীর সহায়তায় শ্রম আদালত ও অভিবাসন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনতে চায় না। মনে হলো, প্রবাসীদের জন্য ন্যায়বিচার যেন নিষিদ্ধ।”
জানা গেছে, ২০২৩ সাল থেকে মেডিসেরামের শ্রমিকরা বকেয়া বেতন, অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার পারিশ্রমিক ও নিয়োগ ফি ফেরতের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। চলতি বছরের মে মাসে প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা আসিফ নজরুল শ্রমিকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে বাস্তবে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন আসেনি বলে অভিযোগ।
ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ওয়ার্কার্স সলিডারিটি নেটওয়ার্ক, সোশালিস অল্টারনেটিভ ও আংকাতান কেসুয়ান সিসওয়া সোশালিস। তারা এক যৌথ বিবৃতিতে কোম্পানির সিদ্ধান্তকে “অবৈধ ও অমানবিক” আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া স্থগিতের আহ্বান জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, “মেডিসেরামের শ্রমিকরা বছরের পর বছর দাসসুলভ পরিবেশে কাজ করছেন। তাদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, বেতন দিতে দেরি হয়, ভিসা নবায়ন করা হয় না, আর নিয়মিত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের হুমকি শুনতে হয়।”
মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, ২০১৭ সাল থেকেই মেডিসেরামের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ উঠে আসছে, কিন্তু এখনো পর্যন্ত কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
শ্রমিক অধিকারকর্মীরা বলছেন, এই ঘটনাই প্রমাণ করে— বিদেশের মাটিতে শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এখনও অনেক দূর যেতে হবে। তারা বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।