
সনাতনী ও খ্রিষ্টীয় রীতি মেনে হয়েছে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা।
ভালোবাসার গল্প যে সীমান্ত মানে না, তার আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন ভারতের এক তরুণ ও দক্ষিণ কোরিয়ার এক তরুণী। তাদের দেখা হয়েছিল সিঙ্গাপুরে, আর বিয়ে হয়েছে ভূমধ্যসাগরের নীল জলে ঘেরা গ্রিসের এক নির্জন দ্বীপে।
ভারতীয় তরুণ কেভিন বাখদা পেশায় একজন ফাইনান্সিয়াল অ্যানালিস্ট, আর দক্ষিণ কোরিয়ার তরুণী মিয়া কাং একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার। দুজনের পরিচয় শুরু হয় সিঙ্গাপুরে একটি আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক সম্মেলনে। প্রথম দেখাতেই দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, ধীরে ধীরে সেই বন্ধুত্ব রূপ নেয় ভালোবাসায়।
ভিন্ন দেশ, সংস্কৃতি ও ভাষার বাধা পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত তারা সিদ্ধান্ত নেন একসাথে নতুন জীবন শুরু করার। বিয়ের স্থান হিসেবে তাঁরা বেছে নেন গ্রীসের ছোট ও নির্জন দ্বীপ ফোলেগান্দ্রোস, যা এজিয়ান সাগরের নীল জলরাশি ও সাদা পাহাড়ে ঘেরা। অনুষ্টানে উপস্থিত ছিলেন কেবল ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সদস্যরা।

সিঁদুর পরিয়ে দিচ্ছেন বর।
কেভিন ও মিয়া চেয়েছিলেন একদম প্রাকৃতিক পরিবেশে, অল্প আয়োজনেই বিয়ে করতে—যেখানে থাকবে আন্তরিকতা, প্রকৃতি ও ভালোবাসা। তাই বিয়ের আয়োজন ছিল মিনিমালিস্ট কিন্তু রোমান্টিক।
বিয়েতে একসঙ্গে মিশেছে ভারতীয় সনাতনী ও কোরীয় খ্রিষ্টীয় রীতি। কনে মিয়া পরেছিলেন ঐতিহ্যবাহী কোরীয় পোশাক ‘হানবক’, আর বর কেভিন ছিলেন গুজরাটি ঐতিহ্যের সাজে। কনের কপালে ‘তিলক’ এঁকে দেন কনের মা—যা দুই সংস্কৃতির সুন্দর সংমিশ্রণকে ফুটিয়ে তোলে।
এই যুগল দুজনেই ভেগান, তাই বিয়ের পুরো খাবার আয়োজনও ছিল সম্পূর্ণ ভেগান-বান্ধব। ভারত, কোরিয়া, গ্রিস, লেবানন, নেপাল ও সিঙ্গাপুর থেকে শেফদের এনে তৈরি করা হয় আন্তর্জাতিক মেন্যু। এমনকি সিঙ্গাপুর থেকে বিশেষভাবে আনা হয়েছিল ওট মিল্ক। তাঁরা চেয়েছিলেন অতিথিরা যেন প্রতিটি খাবারের মধ্যেও সংস্কৃতির মিলন অনুভব করতে পারেন।
বিয়ের কিছু ছবি ও ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অনেকে লিখছেন, “এ যেন সিনেমার মতো এক প্রেমকাহিনি।”

কনের কপালে ‘তিলক’ এঁকে দিচ্ছেন কনের মা। খুশিতে আটখানা বর!
ভোগ সিঙ্গাপুরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কেভিন বলেন, “ভালোবাসা মানে কেবল একজনকে গ্রহণ করা নয়, বরং তার সংস্কৃতি, রীতিনীতি ও বিশ্বাসকেও আপন করে নেওয়া।” আর মিয়া বলেন, “আমরা চেয়েছিলাম আমাদের বিয়েটা যেন শুধু আমাদের না থাকে—দুই সংস্কৃতিরও মিলন ঘটায়।”
সমুদ্রের নীল জল, সূর্যাস্তের আলো আর সাদা বালুকাবেলায় সম্পন্ন হয় তাঁদের অনাড়ম্বর কিন্তু রোমান্টিক আয়োজন। বিশ্বজুড়ে যখন সম্পর্ক ভাঙনের খবরই বেশি শোনা যায়, তখন এই যুগলের ভালোবাসার গল্প যেন প্রমাণ করে—সত্যিকারের অনুভূতি কোনো দেশের সীমারেখায় থেমে থাকে না। এ যেন সত্যিকার অর্থেই এক সীমানাহীন ভালোবাসার গল্প।