
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের আজ বৃহস্পতিবারের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। এতে সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পরিবহন–সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে।
গত তিন দিনে ১৭টি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত মালিক ও চালকেরা। তারা প্রশ্ন তুলেছেন- রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না হয়েও কেন তাদের জীবিকার মাধ্যমকে টার্গেট করা হচ্ছে।
সহিংসতা ও নাশকতা ঠেকাতে গতকাল সকাল থেকে ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। রাজধানীতে ৮৩টি চেকপোস্ট ও সাড়ে ৬০০ টহল দল সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে। ঢাকা, আশুলিয়া, কেরানীগঞ্জ ও সাভারে ১১৫টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ৮৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার পুলিশ সদরদপ্তরে ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। সেখানে চেকপোস্ট ও টহল জোরদার, কেপিআই স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা বৃদ্ধি, আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং সাধারণ মানুষকে হয়রানি না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) শফিকুল ইসলাম বলেন, “ভীতি সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করা হবে। অপরিচিত কাউকে আশ্রয় দেওয়ার আগে পরিচয় নিশ্চিত করুন।”
রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও মেসে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। অতিথিদের পরিচয় যাচাই, রেজিস্টার খাতা পরীক্ষা এবং সন্দেহভাজনদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তোপখানা রোড ও মগবাজারের একাধিক হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও নিয়মিত খোঁজ নিচ্ছেন।
রাজধানীতে র্যাব ৪৪টি চেকপোস্ট বসিয়েছে, ৭০টি টহল দল মাঠে রয়েছে। বিমানবন্দরে ডগ স্কোয়াড দিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছে। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, সারাদেশে র্যাবের সব ব্যাটালিয়নকে মাঠে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নাশকতা আশঙ্কায় রাজধানীর বেশ কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল আজ অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইস্ট ওয়েস্ট, ড্যাফোডিল, এআইইউবি, ইস্টার্ন, শান্ত-মারিয়াম, সোনারগাঁওসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে। ইস্ট–ওয়েস্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, হলি ক্রস, সেন্ট যোসেফ, এজি চার্চ স্কুল, সানিডেইল ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হঠাৎ অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি।”
রাজনৈতিক সহিংসতায় গাড়ি পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মালিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। গাবতলী লিংকের মালিক রুবেল মিয়া বলেন, “বাস পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু ক্ষতিপূরণ কেউ দেয় না।” ট্রাক মালিক আবদুল লতিফ জানান, আতঙ্কে পণ্য পরিবহন কমে গেছে, ট্রাক ভাড়া বন্ধ। বাস মালিক আরিফুল ইসলাম শান্ত বলেন, “রাজনীতির কারণে আমার ১৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিপূরণ দেবে কে?”
‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি থাকলেও সারাদেশে গণপরিবহন চালু রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। শ্রমিকদের সতর্কভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। মামলার প্রধান আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে রয়েছেন।
দেশজুড়ে সহিংসতা ও আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাসদ (মার্কসবাদী)। দলটি বলেছে, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন।