
দেশে বর্তমানে অনুমিত ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা এক কোটি ৩৯ লাখ। আক্রান্ত প্রতি ১০ জনের সাতজনই কর্মক্ষম বয়সী, আর তাঁদের মধ্যে প্রতি চারজনে তিনজন কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভোগেন- উদ্বেগ বা বিষণ্নতা এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) জানিয়েছে, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় ডায়াবেটিস বেড়ে যাওয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এই ধারা চলতে থাকলে ২০৫০ সালে দেশে রোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে দুই কোটি ৩১ লাখে।
এ প্রেক্ষাপটে আজ শুক্রবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য- ‘কর্মস্থলে ডায়াবেটিস সচেতনতা গড়ে তুলুন’। দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতিসহ বিভিন্ন সংস্থা নানা কর্মসূচি পালন করছে।
চিকিৎসকদের মতে, বেশির ভাগ কর্মস্থলে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা খুবই কম। চাকরি হারানোর ভয়, বৈষম্য বা ভুল ধারণার কারণে অনেক কর্মী তাঁদের রোগ গোপন রাখেন, যা মানসিক চাপ বাড়িয়ে রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণকে ব্যাহত করে। তাঁদের পরামর্শ- প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা, স্বাস্থ্যকর খাবার ও মানসিক প্রশান্তি কর্মজীবীদের জন্য অত্যাবশ্যক। পাশাপাশি দরকার সুলভ ওষুধের ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যবান কর্মপরিবেশ।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে রোগীর স্বাভাবিক ও কর্মক্ষম জীবনযাপন সম্ভব। কর্মক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়ালে রোগীরা স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ কর্মস্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হাঁটা ও শারীরিক কার্যক্রমের সুযোগ তৈরি করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর মতে, নিয়মিত ব্যায়াম ও খাদ্যাভ্যাসের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে প্রায় ৬৫ শতাংশ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যায়।
ইনসুলিন নামের হরমোনের ঘাটতিতে রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে গেলে তাকে ডায়াবেটিস বলা হয়। এটি নিরাময়যোগ্য নয়, তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিয়ন্ত্রণ না করলে কিডনি, চোখ, পা ও হৃদ্যন্ত্রের গুরুতর ক্ষতি হয়। ডায়াবেটিস দুই ধরনের-টাইপ–১ ও টাইপ–২। দেশে টাইপ–২ রোগীর সংখ্যাই বেশি। এছাড়া গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের হার ৬–১৪ শতাংশ; আক্রান্ত মায়েদের ভবিষ্যতে টাইপ–২–এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রায় ৫০ শতাংশ।
আইডিএফ বলছে, দেশের ৪৩.৫ শতাংশ রোগীর ডায়াবেটিস এখনো শনাক্ত হয়নি। রোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০৩০ সালের মধ্যে ডব্লিউএইচও পাঁচটি লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে- ৮০% রোগী শনাক্তকরণ, গ্লুকোজ ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ৪০ বছরের ওপরের ৬০% রোগীর স্ট্যাটিন গ্রহণ, এবং টাইপ–১ রোগীদের জন্য সাশ্রয়ী ইনসুলিন–পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা।
বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির তথ্যমতে, দেশে প্রতি তিনজন প্রাপ্তবয়স্কের দুজনই ডায়াবেটিস বা প্রি-ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। দীর্ঘ সময় বসে থাকা, মানসিক চাপ, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের অভাবই প্রধান কারণ। সংগঠনটির সভাপতি ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, কর্মস্থলে স্বাস্থ্যকর খাবার, হাঁটার বিরতি, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও মানসিক সহায়তা থাকলে রোগ নিয়ন্ত্রণ সহজ হয় এবং প্রতিষ্ঠানও দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হয়।