
দুই সন্তান শ্রাবণ ও বাঁধনের সঙ্গে সংগীতশিল্পী মা সাবিনা ইয়াসমীন
বাংলা গানের আকাশে অর্ধশতকেরও বেশি সময় ধরে এক আলোকোজ্জ্বল নক্ষত্র সাবিনা ইয়াসমীন। তাঁর অনন্য কণ্ঠে বাঙালির প্রেম, বেদনা, ইতিহাস আর দেশপ্রেমের সুর আজও প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে রয়েছে। তবে কিংবদন্তি এই শিল্পীর দুই সন্তান মায়ের মতো সংগীত পেশায় না এলেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন নিজেদের ভিন্ন ভিন্ন পথে। একজন দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে, আরেকজন পেশাজীবী হিসেবে কর্মরত লন্ডনে।
বাংলা চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকশিল্পী হিসেবে সাবিনা ইয়াসমীনের উত্থান ১৯৬৭ সালে জহির রায়হানের আগুন নিয়ে খেলা চলচ্চিত্র দিয়ে। এরপরের পাঁচ দশক তিনি বাংলা গানের অন্যতম স্তম্ভ হয়ে ওঠেন। ১৬ হাজারের বেশি গানে কণ্ঠ দেওয়া এই শিল্পী পেয়েছেন স্বাধীনতা পদক, একুশে পদকসহ অগণিত সম্মাননা।

মেয়ে বাঁধনের সঙ্গে সংগীতশিল্পী মা সাবিনা ইয়াসমীন
সাবিনা ইয়াসমীনের মেয়ে ইয়াসমীন ফাইরুজ বাঁধন—পরিবার ও পরিচিতজনদের কাছে তিনি শুধু বাঁধন। ছেলেবেলায় কিছু গান করলেও সংগীতকে পেশা হিসেবে বেছে নেননি। তাঁর পথ ব্যাংকিং সেক্টরে।
ঢাকার ম্যাপল লিফ স্কুলে পড়ার পর তিনি ভারতের মুসোরির উডস্টক স্কুলে হাইস্কুল শেষ করেন। এরপর বেঙ্গালুরুতে ব্যাচেলর অব আর্টস এবং অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব ওলোংগং থেকে মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় এমকম শেষ করেন।
২০০২ সালে দেশে ফিরে ব্যাংকে চাকরি শুরু করেন তিনি। ওয়ান ব্যাংকে ছয় বছর, অন্য ব্যাংকে আরও ছয় বছর কাজের পর এক দশকের বেশি সময় ধরে আরেক শীর্ষ বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত। বর্তমানে তাঁর পদবি— ফার্স্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট।
বাঁধন বলেন, “আমাদের ঘরে সুর যেন সবসময় ভাসত। তবে মা কখনো আমাকে গান করতে জোর করেননি। নিজের মতো করেই ক্যারিয়ার বেছে নিয়েছি।”

ছেলে শ্রাবণের সঙ্গে সংগীতশিল্পী মা সাবিনা ইয়াসমীন
বাঁধনের ছোট ভাই রাফি হোসেন, পরিবারে যিনি শ্রাবণ নামে পরিচিত। তিনিও সংগীতপ্রেমী, তবে পেশা হিসেবে সেই পথ অনুসরণ করেননি। ঢাকার রেডিয়েন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেল শেষে দেড় দশক আগে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। সেখানে সংগীত বিষয়ে পড়ালেখা শুরু করলেও পরবর্তীতে অন্য পেশায় যুক্ত হন।
বর্তমানে শ্রাবণ কর্মরত লন্ডনের পরিচিত ওষুধ প্রস্তুতকারী ও খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হল্যান্ড অ্যান্ড ব্যারেট-এ। এই প্রতিষ্ঠানে তিনি কাজ করছেন প্রায় এক দশক ধরে।
সাবিনা ইয়াসমীন বলেন, “ওরা যে নিজের পছন্দের পথ বেছে নিয়েছে—এতেই আমার শান্তি। মেয়েটা ব্যাংকে ভালো করছে, ছেলেটা লন্ডনে নিজের অবস্থান তৈরি করেছে। আমি কখনো কিছু চাপিয়ে দিইনি।”
সন্তানেরা সংগীতের পথে না এলেও সাবিনা ইয়াসমীনের জীবনে সুরের আবেশ এখনো একইভাবে বিরাজমান। তাঁর সন্তানরা ভিন্ন পেশায় গেলেও মায়ের সুর আর শিল্পকীর্তি তাঁদের বেড়ে ওঠাকে প্রভাবিত করেছে গভীরভাবে।