
ফাইল ছবি
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথমবারের মতো প্রবাসী ভোটারদের জন্য ডাকযোগে ভোট প্রদানের অ্যাপ ‘পোস্টাল ভোট বিডি’ উদ্বোধন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই অ্যাপের মাধ্যমে শুধু প্রবাসীরা নয়, দেশের মধ্যে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি, নিজ এলাকার বাইরে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবী এবং আইনি হেফাজতে থাকা ভোটাররাও ঘরে বসেই ভোট দিতে পারবেন।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে অ্যাপটির উদ্বোধন করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ প্রবাসী এতদিন ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন, এবার এই উদ্যোগ তাদের সেই বঞ্চনা দূর করবে। তার ভাষায়, “এটি শুধু একটি অ্যাপ নয়—বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে আরও প্রতিনিধিত্বশীল করার একটি নতুন অধ্যায়।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইসি কর্মকর্তারা জানান, নিবন্ধন থেকে শুরু করে ব্যালট পাওয়া, ভোট দেওয়া এবং ফেরত পাঠানো—সবমিলিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি হবে ৫ ধাপে। অ্যাপ ডাউনলোড করে নিবন্ধন করলেই ডাকযোগে পাঠানো হবে ব্যালট পেপার। ভোটার খাম খুলে ভোট দিয়ে আবার ডাকযোগে পাঠিয়ে দিলেই ভোট জমা হয়ে যাবে—প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ।
প্রবাসীদের জন্য থাকছে যেসব সুবিধা:
🔹ঘরে বসেই ভোটের সুযোগ (দেশে না ফিরেও ভোট দেওয়া যাবে)
🔹মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সহজ নিবন্ধন
🔹ডাকযোগে ব্যালট পাওয়া ও ফেরত পাঠানো—উভয়ই নিয়মিত পোস্ট সার্ভিসে
🔹এনআইডি + সেলফি যাচাইয়ের মাধ্যমে নিরাপদ অথেন্টিকেশন
🔹প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর অ্যাপে সব প্রার্থীর নাম দেখে ভোট দেওয়ার সুযোগ
🔹বিশ্বের যেকোনো দেশে বসেই নিজের এলাকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা
ইসি জানায়, এই অ্যাপটি পুরোপুরি আইটি-সাপোর্টেড হলেও ভোট প্রদানের অংশটি থাকবে ম্যানুয়েল, যাতে কোনো সাইবার ঝুঁকি ভোটকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে। যদিও বিশ্বব্যাপী এই ধরনের সিস্টেমে পাঁচ বছর ট্রায়াল চলে, বাংলাদেশ খুব সীমিত সময়েই পরীক্ষা করে সিস্টেমটি চালু করছে—তবে কমিশনের দাবি, ভোটে অনিয়ম ঠেকাতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রবাসীদের নিবন্ধন কোথায়, কবে?: সাতটি অঞ্চলে ভাগ করে এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া চলবে ১৯ নভেম্বর থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে। এই ৩৫ দিনে পাঁচদিন করে নিবন্ধনের সময় দেওয়া হবে।
🔹পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা: ১৯–২৩ নভেম্বর
🔹উত্তর আমেরিকা ও ওশেনিয়া: ২৪–২৮ নভেম্বর
🔹ইউরোপ: ২৯ নভেম্বর–৩ ডিসেম্বর
🔹মধ্যপ্রাচ্য: ৪–৮ ডিসেম্বর
🔹দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া: ৯–১৩ ডিসেম্বর
🔹মধ্যপ্রাচ্য (সৌদি বাদে): ১৪–১৮ ডিসেম্বর
🔹সরকারি কর্মচারী, নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি ও আইনি হেফাজতের ভোটার: ১৯–২৩ ডিসেম্বর
এভাবে প্রথমবারের মতো বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাংলাদেশিরা সহজেই জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন—যা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।