
টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও সাবেক পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলী
টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও সাবেক পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ও কার্যকরী হিসেবে চিহ্নিত করে হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছে। রোববার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৩৭৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, প্রদীপ কুমার দাশ হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড ও পরিকল্পনাকারী ছিলেন। তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভিকটিমের বুকের হাড় ভাঙাসহ গলার পাশে পা দিয়ে চেপে ধরে মৃত্যুকে নিশ্চিত করেছিলেন। অপর আসামি লিয়াকত আলী পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে সরকারি পিস্তল দিয়ে ভিকটিমের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে পরপর চারটি গুলি করেছিলেন, যা ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কারণ হিসেবে প্রমাণিত।
পূর্বের বিচারিক আদালতের রায়ে প্রদীপ ও লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড এবং অপর ছয় আসামিকে জাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। হাইকোর্টও এই সাজা বহাল রেখেছে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ছয় আসামি হলেন: সাবেক এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, সাগর দেব, কক্সবাজারের বাহারছড়ার মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নিজাম উদ্দিন। হাইকোর্ট উল্লেখ করেছে, তাদের ষড়যন্ত্র, সহায়তা ও সাধারণ অভিপ্রায় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড যথাযথ।
রায়ে আরও বলা হয়েছে, মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান ২০২০ সালের ২ জুলাই কক্সবাজার-টেকনাফ অঞ্চলে ভিডিও ও স্থিরচিত্র ধারণের সময় স্থানীয় অসামাজিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত হন। প্রদীপ কুমার দাশ হুমকি দিয়ে ভিকটিমকে এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেন, কিন্তু তিনি তা মানেননি। এরপর প্রদীপ লিয়াকতসহ আসামিদের মাধ্যমে সিনহার হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়।
মামলার প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে লিয়াকতের গুলিতে সিনহা নিহত হন। ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রদীপ ও লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড, অপর ছয় আসামিকে জাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। হাইকোর্ট ২০২২ সালের ২ জুন এই রায় নিশ্চিত করেন।
সুপ্রিম কোর্টে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের মাধ্যমে হত্যা মামলার সকল সিদ্ধান্তের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।