
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের ওপর চলমান শোষণ, দুর্ব্যবহার ও প্রতারণা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা। তারা জানিয়েছেন, দেশটিতে অভিবাসী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগতভাবে অন্যায্য আচরণ করা হচ্ছে এবং অনেক শ্রমিক ঋণের ফাঁদে পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
বুধবার হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত হওয়া, ভুয়া নিয়োগপত্র, চুক্তি অনুযায়ী কাজ না পাওয়া এবং সরকারি সংস্থার পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় মালয়েশিয়ায় বহু বাংলাদেশি শ্রমিক চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, বর্তমানে মালয়েশিয়ায় আট লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক বৈধ কাজে নিয়োজিত। তবে অনেককে সরকারি নির্ধারিত হারের চেয়ে পাঁচ গুণ পর্যন্ত বেশি ফি দিতে হয়েছে। উচ্চ ব্যয় শোধ করতে গিয়ে শ্রমিকরা চরম আর্থিক চাপ ও শোষণের মুখে পড়ছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সঠিক নথিপত্র না থাকলে শ্রমিকদের গ্রেপ্তার, আটক, অমানবিক আচরণ বা দেশ থেকে বিতাড়নের ঝুঁকি রয়েছে। মালয়েশিয়ায় কঠোর অভিবাসন আইন অনুযায়ী নিয়মিত ধরপাকড় চলছে, যেখানে বর্তমানে প্রায় ১৮ হাজার শ্রমিক, শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থী আটক আছেন।
এরই মধ্যে জোরপূর্বক শ্রমের অভিযোগে মালয়েশিয়ার কয়েকটি কারখানার বিরুদ্ধে আমদানি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘ফোর্সড লেবার রেগুলেশন’ ২০২৭ সালে কার্যকর হলে প্রতারণা ও ঋণের ফাঁদে শ্রমিকদের জড়ানো কোম্পানিগুলো এ বিধির আওতায় আসতে পারে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের ‘ফেয়ার লেবার অ্যাসোসিয়েশন’-এর নির্দেশনা অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছে, যাতে নিয়োগ ব্যয় সরবরাহ চেইনে স্বচ্ছভাবে অন্তর্ভুক্ত থাকে এবং শ্রমিকরা আইনি সহায়তা পেতে পারেন।
জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞরা শ্রমিক পাঠানো দেশগুলোকে অভিযোগ তদন্ত ও প্রতিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের মতে, প্রত্যাবাসন বা প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের লঙ্ঘন।
বিশেষজ্ঞরা আরও সতর্ক করেন, অভিবাসী শ্রমের ওপর যেসব দেশের অর্থনীতি নির্ভরশীল, তাদের আচরণে পরিবর্তন না এলে ভবিষ্যতে আরও নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি তৈরি হবে এবং হাজারো শ্রমিকের দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হবে।
তাদের মত, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার উচিত শ্রমিক সুরক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া এবং শ্রমিকদের প্রতি দুর্ব্যবহার বন্ধ করা- যাতে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকি হ্রাস পায়।