সিউল, ২৩ জানুয়ারি ২০১৪:
বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি রফতানি গত বছর উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ২০১২ সালে বিভিন্ন দেশে ২ লাখ ৯ হাজার ৩৬৮ দক্ষ জনশক্তি রফতানি করা হলেও ২০১৩-এ তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮০ হাজার ৪৮৮ জনে। এ হিসাবে গত বছর এই শ্রেণীর শ্রমিক রফতানি কমেছে ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বলছে, ২০১৩ সালে সামগ্রিক জনশক্তি রফতানি যে হারে কমেছে, দক্ষ জনশক্তি রফতানি কমেছে তার চেয়ে বেশি হারে। গত বছর জনশক্তি রফতানি হয় ৪ লাখ ৯ হাজার ২৫৩ আর ২০১২ সালে ৬ লাখ ৭ হাজার ৭৯৮ জন। এর মধ্যে দক্ষ শ্রমিক ছিলেন ২ লাখ ৯ হাজার ৩৬৮ জন। ২০১১ সালেও দক্ষ শ্রমিক রফতানি হয়েছিল ২ লাখ ২৯ হাজার ১৪৯ জন। এছাড়া ২০১০ সালে এ শ্রেণীর জনশক্তি রফতানি হয় ৯০ হাজার ৬২১ ও ২০০৯-এ ১ লাখ ৩৪ হাজার ২৬৫ জন।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশ থেকে প্রতিনিয়ত দক্ষ জনশক্তির চাহিদাপত্র আসছে। বিভিন্ন দেশ থেকে শুধু জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্যই প্রতি বছর ৩০-৪০ হাজার দক্ষ জনশক্তির চাহিদাপত্র পায় বিএমইটি। এর বেশির ভাগই আসে সিঙ্গাপুর থেকে। কিন্তু দক্ষ জনশক্তির অভাবে এ সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। এছাড়া নারী শ্রমিকদের বেশির ভাগ গৃহকর্মী হিসেবে বহির্গমন করলেও পোশাক শ্রমিক ও নার্সেরও ভালো চাহিদা রয়েছে।
জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সভাপতি মো. শাহাজালাল মজুমদার বণিক বার্তাকে বলেন, বিভিন্ন দেশে দক্ষ শ্রমিক রফতানির সম্ভাবনা থাকলেও তা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। বর্তমানে ৭৫ শতাংশ নন-টেকনিক্যাল ও ২৫ শতাংশ টেকনিক্যাল শ্রমিক বহির্গমন করছেন। টেকনিক্যাল ও দক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু জনশক্তি রফতানি কয়েকটি দেশনির্ভর হওয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে না। মেডিকেল ক্লিনার ও নির্মাণ খাতে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা থাকলেও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের বাজার বন্ধ থাকায় সে সুযোগও কমছে।
বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৯টি দেশে বাংলাদেশের পেশাদার, দক্ষ ও আধা দক্ষ শ্রমিক কাজ করছেন। ২০১৩ সালে সবচেয়ে বেশি কর্মী গেছেন ওমানে, ১ লাখ ৩৪ হাজার ২৮ জন। এরপর সিঙ্গাপুরে গেছেন ৬০ হাজার ৫৭, কাতারে ৫৭ হাজার ৫৮৪, বাহরাইনে ২৫ হাজার ১৫৫, জর্ডানে ২১ হাজার ৩৮৩ ও লেবাননে ১৫ হাজার ৯৮ জন।
বিএমইটি মহাপরিচালক বেগম শামছুন নাহার বলেন, জনশক্তি রফতানির বাজারে পরিবর্তন ঘটছে। একই দেশে নির্দিষ্ট সংখ্যক শ্রমিক যাওয়ার পর নতুন শ্রমিকের চাহিদা কমে যায়। এ কারণে আগের বাজারগুলোয় জনশক্তি রফতানি কমেছে। তবে নতুন বাজার সৃষ্টি হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে নতুন শ্রমবাজার তৈরির উদ্যোগ অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি রফতানি বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোয় শ্রমিকদের প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে।
বিএমইটি সূত্রে জানা যায়, বাগেরহাট, ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জ, চাঁদপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলায় নতুন পাঁচটি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি (আইএমটি) স্থাপনের কাজ চলছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিএমইটি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে। ২০১৪ সালের জুন নাগাদ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
জনশক্তি রফতানি কমায় বিদায়ী বছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে ঋণাত্মক ধারা দেখা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ২০১৩ সালে প্রবাসীরা ১৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। ২০১২ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৪ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১১ সালে রেমিট্যান্স আসে ১২ দশমিক ১৭ কোটি ডলার, ২০১০ সালে ১১ বিলিয়ন ডলার ও ২০০৯ সালে ১০ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে চাকরি নিয়ে ২৬ লাখ ৯৯ হাজার ৭৬৮ জন দক্ষ কর্মী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গেছেন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএমইটি পরিচালিত মোট ৩৭টি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) রয়েছে। নতুন আরো ৩৫টি টিটিসি স্থাপনের কাজ চলছে। সূত্রঃ বণিকবার্তা।























